মানুষ ভুল করে। কারণ আল্লাহ মানুষকে ভুলভ্রান্তিপূর্ণ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এই ভুল বা গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার দরজা আল্লাহ নিজেই উন্মুক্ত রেখেছেন—আর সেটি হলো তাওবাহ (তওবা) ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)। ইসলামে তাওবাহ এমন একটি মহান ইবাদত যা আল্লাহর অসীম রহমত ও ক্ষমার প্রতীক।
তাওবাহ ও ইস্তেগফারের অর্থ
- তাওবাহ: আরবি শব্দ “তাওবাহ” এর অর্থ ফিরে আসা। অর্থাৎ গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
- ইস্তেগফার: এর অর্থ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আমরা প্রতিদিন নামাজের পর বা যেকোনো সময় ইস্তেগফার করতে পারি।
কোরআনে তাওবাহর গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বহু স্থানে তাওবাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন—
- সূরা আন-নূর (২৪:৩১): “হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবাহ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”
- সূরা আল-বাকারা (২:২২২): “আল্লাহ তাওবাহকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদের ভালোবাসেন।”
হাদিসে তাওবাহর ফজিলত
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
- “প্রত্যেক আদম সন্তান গুনাহ করে, আর গুনাহকারীদের মধ্যে সেরা তারা যারা তাওবাহ করে।” (তিরমিজি)
- নবীজী প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি ইস্তেগফার করতেন, অন্য হাদিসে এসেছে ১০০ বারেরও বেশি।
তাওবাহর শর্ত
সঠিক তাওবাহর জন্য চারটি শর্ত পূরণ করতে হয়:
- গুনাহ কাজ তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দেওয়া।
- আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
- ভবিষ্যতে আর সেই গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
- যদি কারও হক নষ্ট করা হয়ে থাকে, তবে সেই হক আদায় করে দেওয়া বা ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।
ইস্তেগফারের কিছু বিশেষ দোয়া
- আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই)।
- আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জম্বিন ওয়া আতুবু ইলাইহি (আমি আমার রব আল্লাহর কাছে প্রত্যেক গুনাহ থেকে ক্ষমা চাই এবং তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করি)।
- নবীজির শিক্ষা দেওয়া সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার: “আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাকতানি ও আনা আব্দুক…”
(এটি সবচেয়ে উত্তম ইস্তেগফার দোয়া।)
তাওবাহর ফলাফল
- গুনাহ ক্ষমা হয়।
- অন্তরে প্রশান্তি আসে।
- রিজিকে বরকত হয়।
- দোয়া কবুল হয়।
- আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হয়।
আধুনিক জীবনে তাওবাহর প্রয়োগ
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপচয় বা অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত হওয়া।
- ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতারণা বা সুদ থেকে ফিরে আসা।
- সময় নষ্টের পরিবর্তে ইবাদত ও উপকারী কাজে মনোযোগী হওয়া।
- প্রতিদিন অন্তত একবার নিজের কাজগুলো পর্যালোচনা করে ইস্তেগফার করা।
উপসংহার
তাওবাহ ও ইস্তেগফার শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং এটি হলো একজন মুসলিমের আত্মশুদ্ধি, নৈতিকতা ও ঈমানকে মজবুত করার উপায়। গুনাহ যতো বড়ই হোক না কেন, আন্তরিক তাওবাহ করলে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করেন। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ফিরে আসা এবং ইস্তেগফারের মাধ্যমে জীবনের পাপ মোচন করা।
তাওবাহ ও ইস্তেগফার নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন
তাওবাহ ও ইস্তেগফারের মধ্যে পার্থক্য কী?
তাওবাহ মানে গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর ইস্তেগফার মানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। সাধারণত ইস্তেগফার তাওবাহর অংশ হিসেবে ধরা হয়।
বড় গুনাহ করলে কি তাওবাহ কবুল হয়?
হ্যাঁ, আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তাওবাহ করলে বড় গুনাহ হলেও আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেন। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তিনি সব গুনাহ ক্ষমা করেন (সূরা আজ-জুমার ৩৯:৫৩)।
তাওবাহর শর্তগুলো কী কী?
তাওবাহর চারটি প্রধান শর্ত হলো:
গুনাহ কাজ ত্যাগ করা।
আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
আর কখনও সেই গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
কারও হক নষ্ট করলে তা ফিরিয়ে দেওয়া বা ক্ষমা চাওয়া।
প্রতিদিন কতবার ইস্তেগফার করা উচিত?
নির্দিষ্ট সংখ্যা বাধ্যতামূলক নয়, তবে হাদিসে এসেছে নবীজী (সা.) প্রতিদিন ৭০–১০০ বার ইস্তেগফার করতেন। তাই মুসলিমদেরও প্রতিদিন বহুবার ইস্তেগফার করা উচিত।
শুধু মুখে ইস্তেগফার করলেই কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?
না, শুধু মুখে বলা যথেষ্ট নয়। এর সাথে আন্তরিক অনুতাপ ও গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে।
তাওবাহ কি কিয়ামতের আগ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য?
হ্যাঁ, কিয়ামত শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত কিংবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাওবাহ গ্রহণ করেন। মৃত্যুর সময় এসে গেলে আর তাওবাহ গ্রহণ করা হয় না।
Your comment will appear immediately after submission.