১৩ এপ্রিল, ১৯৮৪ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৪ এশিয়া কাপের চূড়ান্ত শিরোপা নির্ধারণকারী ম্যাচ। যদিও এটি কোনো আনুষ্ঠানিক ফাইনাল ছিল না, তবে রাউন্ড-রবিন পদ্ধতির এই শেষ ম্যাচটির ফলাফলের ওপরই নির্ভর করছিল টুর্নামেন্টের বিজয়ী ও রানার্স-আপ দল। এই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তান।
টসে জিতে পাকিস্তানের অধিনায়ক জহির আব্বাস প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন।
বৃষ্টির কারণে ওভার সংখ্যা কমানো হয়নি, তবে ম্যাচটি ছিল ৪৬ ওভারের। ভারতীয় ওপেনার সুনীল গাভাস্কার দ্রুত আউট হলেও, উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সুরিন্দর খান্না দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তিনি ৭২ বলে ৫৬ রানের একটি প্রয়োজনীয় ইনিংস খেলেন, যা ভারতের ইনিংসের ভিত্তি স্থাপন করে। সুরিন্দর খান্নাকে সঙ্গ দেন গুলাম পার্কার অপরাজিত ৩২ এবং সন্দীপ পাতিল ৪০*। ভারতের মিডল অর্ডার দৃঢ়তা দেখানোর ফলে তারা নির্ধারিত ৪৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রানের একটি লড়াকু স্কোর তোলে। পাকিস্তানের পক্ষে শহিদ মাহবুব কিপটে বোলিং করে ১/২৩ উইকেট নেন।
ভারতের স্কোরকার্ড: ১৮৮ রান/৪ উইকেট/৪৬ ওভার
জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় তারা কখনই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে ছিল না। পাকিস্তানের পক্ষে জহির আব্বাস ৪৭ এবং মোহসিন খান ৩৫ কিছুটা চেষ্টা করলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ভারতীয় বোলাররা সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামিয়ে দেয়। রজার বিনি ৩টি এবং মদন লাল ২টি উইকেট নেন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান মাত্র ৩৯.৪ ওভারে ১৩৪ রানে অলআউট হয়ে যায়।
পাকিস্তানের স্কোরকার্ড: ১৩৪ রান/১০ উইকেট/৩৯.৪ ওভার
এই ম্যাচটি ভারত ৫৪ রানে জয়লাভ করে।
সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারত এই জয়ের মাধ্যমে টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে এবং এশিয়া কাপের প্রথম শিরোপা জেতে। আগের ম্যাচের ফলের ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কা রানার্স-আপ হয়।
সুরিন্দর খান্না তার ধারাবাহিক ব্যাটিং পারফরম্যান্সের জন্য এই ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ এবং টুর্নামেন্টের প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার লাভ করেন। এই ম্যাচটি ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের সূচনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. খান্নার ম্যাচ-জেতানো ৫৬ রান: সুরিন্দর খান্না, যিনি আগের ম্যাচেও অর্ধশতক করে ভারতকে জিতিয়েছিলেন, এই চূড়ান্ত ম্যাচেও ৫৬ রানের একটি মূল্যবান ইনিংস খেলেন, যা ভারতকে একটি লড়াকু পুঁজি এনে দেয়। এটি তার প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার জেতার পথ প্রশস্ত করে।
২. বিনি-মদন লালের সম্মিলিত আঘাত: রজার বিনি ৩/৩৩ এবং মদন লাল ২/২৩-এর সম্মিলিত বোলিং আক্রমণ পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। নিয়মিত উইকেট তুলে নেওয়ার ফলে পাকিস্তান আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।
৩. ভারতের অপরাজিত শিরোপা: এই জয়ের মধ্য দিয়েই ভারত এই টুর্নামেন্টের তিনটি দলের মধ্যে একমাত্র দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে এবং এশিয়া কাপের প্রথম শিরোপা নিজেদের করে নেয়।
৪. পাকিস্তানের রানের খরা: পাকিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যানই এই ম্যাচে বড় স্কোর করতে পারেননি। তাদের ব্যাটিং ব্যর্থতাই জয়ের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
৫. নতুন ইতিহাসের জন্ম: এই ম্যাচটি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের(AAC) প্রথম টুর্নামেন্টের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং এশিয়া কাপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাদেশীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১৯৮৪ এশিয়া কাপে কোনো আনুষ্ঠানিক ফাইনাল হয়েছিল কি?
না। ১৯৮৪ সালের এশিয়া কাপটি ছিল একটি রাউন্ড-রবিন টুর্নামেন্ট, যেখানে দলগুলো একে অপরের সাথে একবার করে খেলেছিল। পয়েন্ট টেবিলের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী দল ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
এই ম্যাচটি কেন শিরোপা নির্ধারণকারী ছিল?
ভারত এই ম্যাচটি জেতার ফলে মোট ৮ পয়েন্ট নিয়ে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন হয়। যদি ভারত হেরে যেত, তাহলে পয়েন্ট টেবিলের পরিস্থিতি পাল্টে যেত। তাই টুর্নামেন্টের নিয়মানুসারে ফাইনাল না হলেও, এই ম্যাচটিই ছিল চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণের চাবিকাঠি।
এই টুর্নামেন্টের প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার কে পেয়েছিলেন?
ভারতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সুরিন্দর খান্না টুর্নামেন্টে তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মোট ১০৭ রান জন্য প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার লাভ করেন।
ভারত এই শিরোপাটি মোট কতবারের মধ্যে প্রথম জিতেছিল?
ভারত এই টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে শিরোপা জেতে এবং এটি তাদের প্রথম এশিয়া কাপ জয়।
Your comment will appear immediately after submission.