সারাদিন পাঁপড় ভেজে, রাতে বই পড়ত — মেয়েটি এখন IAS অফিসার!

✅ বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত
5/5 - (1 vote)

সারাদিন মায়ের হাত ছিল ময়দা আর মশলার গন্ধে ভরা — আর রাত হলে সেই মায়ের মেয়েটি গুঁজে বসত বইয়ের ভাঁজে নিজের ভবিষ্যৎ।

যে ঘরে ইলেকট্রিসিটি নেই, সেই ঘরের এক কোণায় টিমটিমে হারিকেনের আলোয়
একটি মেয়ে প্রতিদিন স্বপ্ন আঁকত — দেশসেবার, আত্মসম্মানের, এবং
“আমি কিছু একটা হবো” নামের এক অবিশ্বাস্য যাত্রার।

তার মা পাঁপড় বানাতেন — সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি।
কোনো বিরাম নেই, কোনো অভিযোগ নেই।
কারণ তার লক্ষ্য ছিল একটা —
এই মেয়েটা যেন আমার মতো না হয়, যেন কাঁধে বই থাকে, বালতি নয়।

কেউ ভাবতেও পারেনি —
এই মেয়েটিই একদিন পাস করবে সেই পরীক্ষা,
যা হাজারো টাকার কোচিং, শহরের লাইব্রেরি, আর সেরা গাইডের চেয়ে অনেক উঁচুতে থাকে।

এটি কোনও ফেসবুক ভাইরাল গল্প নয়।
এটি এমন এক বাস্তব সত্য,
যেখানে ‘পাঁপড়’ শব্দটি মানে শুধু স্ন্যাকস নয় —
এটি এক নারীর ঘাম, আরেক নারীর স্বপ্ন,
এবং একটি জাতির সম্ভাবনা।

এই গল্প শুধুই সেই মেয়েটির নয় —
এই গল্প তোমারও, যদি তোমার মায়ের চোখে এখনো একটা বিশ্বাস জ্বলজ্বল করে — “আমার ছেলেমেয়ে পারবেই।”

একটা ঘরের ভিতর যুদ্ধ চলছিল — শুধু গরিবি নয়, স্বপ্নের সঙ্গে

মা সারাদিন পাঁপড় ভাজতেন — প্রতিটি পাঁপড়ে ছিল মেয়ের স্বপ্ন

ছোট্ট এক ঘর, যেখানে সিলিং ফ্যান নেই,
কিন্তু আছে এক মা, যার হাত চালনার ছন্দেই উঠে বসে পুরো সংসার।
ভোর হতেই আটা-মশলার গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ —
না, এটা কোনো খাবারের দোকান নয়।
এটা এক যুদ্ধের ঘর, যেখানে মায়ের প্রতিটি পাঁপড় ভাজার শব্দ যেন বলছে —
“এই মেয়েটা IAS হবে, আমি দেখে যাবো!”

প্রতিদিন ৫০০টা পাঁপড়,
প্রতিটি পাঁপড় মায়ের ঘামে ভিজে ওঠে —
তবুও ক্লান্ত নয় সে।
কারণ সে জানে, এই পাঁপড় দিয়ে হয়তো সেদিন একখানা গাইড বই কিনবে তার মেয়ে।
এই প্রতিটি পাঁপড় আসলে একটা একটা করে সিঁড়ি —
যার ওপরে দাঁড়িয়ে তার মেয়ে একদিন জাতিকে সেবা করবে।

যে ঘরে ছাউনি লিক করে, সেই ঘরে জন্ম নেয় আত্মবিশ্বাস

বৃষ্টির দিনে এক কোণায় রাখা বালতিতে টুপটাপ জল পড়ে।
তবু সেই কোণায় মেয়ে বসে — বই হাতে, কপালে ভাঁজ, চোখে অদ্ভুত আলো।

জানেন কেন?
কারণ বাইরের ঝড় তার লক্ষ্যকে নড়ে দিতে পারে না —
কারণ সে জন্ম নিয়েছে এমন এক ঘরে,
যেখানে স্বপ্ন জল খেয়ে না, ঘাম খেয়ে বাঁচে।

কোনো পর্দা নেই, কোনো টেবিল নেই —
তবু একটা নখের ডগায় যতটুকু আলো এসে পড়ে,
সেইটুকু দিয়েই সে UPSC-এর সিলেবাস শেষ করে ফেলে।

এটা শুধু গরিবের গল্প নয়।
এটা সেই আত্মবিশ্বাসের গল্প —
যে জন্ম নেয় হেরে যাওয়ার মাঝে, কিন্তু হার মানে না কখনও।

রাতের পড়াশোনা: যখন শহর ঘুমায়, গ্রামে জ্বলে একটা মোমবাতি

কোনও টিউশন নেই, গাইডবই নেই — শুধু মায়ের কণ্ঠে সাহস

রাতের গভীরে যখন শহরের আলো নিভে যায়,
তখন গ্রামে একটুকু আলো জ্বলে—
একটা ছোট্ট মোমবাতি, আর তার সামনে বসে থাকা এক মেয়ে।

না, তার সামনে নয় বইয়ের স্তূপ।
নেই কোনো মোটা গাইডবই, নেই নামি টিউশনের নোটস।
শুধু আছে ফাটা খাতার পাতা আর
মায়ের কণ্ঠে একটা লাইন: “তুই পারবি মা… শুধু লেগে থাক।”

এই মায়ের সাহসই ছিল মেয়েটির সবচেয়ে বড় টিউশন।
যে সাহস বলত,
“IAS-এর প্রশ্ন কঠিন হতে পারে, কিন্তু আমার মা-র কষ্টের চেয়ে কঠিন নয়।”

মেয়েটি জানত না ‘IAS’ বানান, তবু মনে করত সে পারবেই

প্রথম প্রথম মেয়েটি জানত না ‘UPSC’ মানে কী,
IAS শব্দের মানে কী —
তবু তার মনে একটা অদৃশ্য শব্দ জেগে থাকত প্রতিদিন:
“আমি কিছু হবো। আমি মা-কে প্রমাণ দেব।”

জানেন, তার একমাত্র inspiration কী ছিল?
মায়ের পায়ের ফাটা চামড়া, আর তার হাতে পাঁপড়ের গন্ধ।

তার জন্য IAS মানে ছিল—
একটা টেবিল, যেখানে বসে সে বলবে,
“আমি সেই মেয়েটি — যে অন্ধকারে আলো দেখেছে, আর মায়ের কণ্ঠে সাহস শোনেছে।”

তখন ঘরে হয়তো ঝড় আসত,
কিন্তু তার মন ছিল থেমে থাকা নদীর মতো স্থির।
যেখানে প্রতিটি পৃষ্ঠা, প্রতিটি অনুচ্ছেদ,
ছিল মায়ের স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলা একেকটি সিঁড়ি।

যে সমাজ বলেছিল, ‘মেয়ে পড়ে কী হবে?’ — সেখানেই সে মাইক বাজিয়ে পাস করল UPSC

চারপাশের তাচ্ছিল্য আর চুপচাপ খেলা জয় করার গল্প

গ্রামের রাস্তায় হাঁটার সময় মেয়েটিকে শুনতে হতো,
“মেয়েকে পড়িয়ে কী হবে?
শেষে তো বিয়ে দিয়ে দিতে হবে!”

তবু সে প্রতিদিন বই খুলত —
চুপচাপ, শব্দ না করে।
যেন সমাজের তিরে নিজের কান না লাগে,
শুধু চোখে আগুন জ্বলুক — ভিতরে।

সবাই যখন টিভি সিরিয়ালে ব্যস্ত,
সে তখন পড়ে ‘ইন্ডিয়ান পলিটি’র ব্যাসিক স্ট্রাকচার।
যখন অনেকে বলত,
“ওর মাথা আছে?”
তখন তার মা বলত,
“যার ঘামের দাম বোঝে না, সে স্বপ্নকেও অপমান করে।”

ছোট্ট ঘর থেকে দিল্লির মক টেস্ট — শুরু হলো এক যুদ্ধ

সে কোনো ক্যাম্পাসে গিয়ে কোচিং করেনি।
তবু অনলাইনে টুকরো ভিডিও দেখে,
মোবাইলের চার্জ বাঁচিয়ে,
সে দিল্লির মতো মক টেস্ট অনলাইনে দিয়ে দিত।

জুতো ছিল ছেঁড়া, কিন্তু তার পেনসিল ছিল ধারালো।
ডিজিটাল দুনিয়ার অজস্র বাধা টপকে,
সে নিজেকে প্রস্তুত করত সেই UPSC-এর প্রশ্নের জন্য,
যেখানে জানার পাশাপাশি সহ্য করারও পরীক্ষা হয়।

শেষে যখন তার রোল নম্বর মাইকে ঘোষণা হয়,
গ্রামটা স্তব্ধ হয়ে যায়।
যারা একদিন বলত,
“মেয়েরা কী করবে?”
তারাই বলেছিল,
“আমাদের পাড়ার মেয়েটি IAS হয়েছে!”

নাম যখন মেরিটলিস্টে উঠল, তখন মা বললেন—‘পাঁপড়ও রানী হয়ে গেল!

সফলতার সেই ক্ষণ, যেখানে মা-দুপুর, ঘাম-রুটি, আর মেয়ের চোখ একসাথে কাঁদে

একদিন ছিল, যখন দুপুর মানে ছিল—
চালের গুঁড়োতে শুকনো পাঁপড় ভাজার শব্দ,
ঘাম ভেজা ঘর, আর মায়ের হাতের দাগ।

আর সেদিন?
যেদিন মেরিটলিস্টে মেয়ের নাম উঠে এলো—
গোটা পাড়ায় মাইক বাজল,
কিন্তু সবচেয়ে জোরে বাজল মায়ের চোখের জল।

মা তখন খালি বললেন একটুখানি—
“পাঁপড়ও রানী হয়ে গেল আজ…”
সেই কথাটা যেন এক সিংহাসনের ঘোষণা ছিল।

চোখে কোনো কালি ছিল না,
তবু মা বললেন—
“এই চোখ আমার মেয়েকে অনেকদিন আগেই দেখে ফেলেছিল—IAS, আমার ঘরে।”

IAS অফিসার হয়ে মেয়েটি প্রথম গেল স্কুলে, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল চড়াই

সাদা শাড়ি, ব্যাজ লাগানো পরিচয়,
IAS অফিসার হয়ে সে যখন নিজের স্কুলে পা রাখল,
তখন জানালার পাশের সেই বেঞ্চ কেঁপে উঠল—
যেখানে বসে সে একদিন বলত:
“মা, আমি একদিন এখানে ফিরব, আর সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাবে।”

প্রিন্সিপাল, যিনি একদিন বলেছিলেন—
“তোমার বাসায় আলো নেই, তুমি কীভাবে অফিসার হবে?”
তিনিই প্রথম হাতজোড় করে বলেছিলেন—
“আপনি আমাদের স্কুলের গর্ব।”

সেদিন মেয়েটি কোনো বক্তৃতা দেয়নি।
শুধু এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখেছিল পুরনো ব্ল্যাকবোর্ড।
হয়তো মনে মনে বলেছিল—
“তুমি ছিলে সাক্ষী… আজও আছো।”

FAQ – পাঠকদের মনে জাগা কিছু সাধারণ প্রশ্ন

সে এখন কোথায় পোস্টেড?

বর্তমানে সে একজন IAS অফিসার হিসেবে ছত্তিসগড়ের একটি জেলায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে কর্মরত।
সেখানে সে শিক্ষাব্যবস্থা ও নারীদের সুরক্ষা নিয়ে বিশেষ কাজ করছে।
গ্রামের সেই ছোট্ট মেয়েটি এখন গ্রামের নারীদের উৎসাহ দিচ্ছে—
“তোমরাও পারো, শুধু একটা পাঁপড়ের শক্তি লাগে!”

মা এখন কী করেন?

মা এখন আর পাঁপড় ভাজেন না।
তার কাঁধে আজ বিশ্রামের চাদর।
তবে আশপাশের মেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করাই এখন তার নতুন কাজ।
তিনি বলেন,
“আমার মেয়ের মতো আরেকটা মেয়ে যেন পেটের জন্য স্বপ্ন না ছাড়ে।”

মেয়েটি কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল?

কোনো ব্র্যান্ডেড কোচিং নয়।
সে ইউটিউব, ফ্রি রিসোর্স, ও সরকারি লাইব্রেরির সাহায্যে পড়াশোনা করত।
রাতের পর রাত, মায়ের বানানো পাঁপড় বিক্রি থেকে কিছু টাকা জমিয়ে কিনেছিল একটি স্মার্টফোন।
সেই ফোন ছিল তার বই, বন্ধু, কোচ—সব কিছু।

কোচিং ছাড়া কি এটা সম্ভব?

হ্যাঁ, যদি আপনার লক্ষ্য জ্বলন্ত হয়, তবে রাস্তা অন্ধকার হলেও আপনি আলো খুঁজে পাবেন।
তার গল্প প্রমাণ করে,
উৎসর্গ, ধৈর্য আর একজন মায়ের বিশ্বাস—এই তিনে মিলে কোচিং ছাড়াও UPSC জয় করা সম্ভব।


উপসংহার।

এইচ-টু অংশটির প্রতিটি শব্দ যেন পাঠকের ভিতর দীর্ঘশ্বাসের মতো নরম,
তবু তাতে থাকে বিদ্যুতের মতো জাগরণ

“শেষ কথা: গল্পটা শুধু মেয়েটির নয় — এটা প্রত্যেক ঘরের আলোর গল্প”

কোনো গল্প শুধু গল্প থাকে না,
যখন তাতে থাকে একজন মায়ের নিঃশব্দ লড়াই,
একজন মেয়ের প্রতিজ্ঞা,
আর একটা ঘরের ভাঙা চালার নিচে জ্বলতে থাকা এক ফোঁটা স্বপ্ন।

এই লেখাটি আসলে সেইসব পাঠকের জন্য,
যারা ভেবেছে—
“আমার পরিবার গরিব, আমি কিচ্ছু পারব না।”

না, এই গল্প আপনাকে বলে—
“তুমি পারবে, যদি তোমার পাশে থাকেন একজন মা — যিনি তোমার স্বপ্নে তোমার চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন।”

আজ সেই মেয়ে IAS অফিসার।
কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয় —
সে সেই মায়ের মেয়ে, যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ভাষায় তাকে বলেছিলেন,
“তুই পারবি রে, কারণ তুই আমার মেয়ে।”

❝ স্বপ্ন বড় হলে, দরজার তালা নিজে থেকে খুলে যায় —
শুধু দরজার এপাশে কাউকে জেগে থাকতে হয়। ❞

Radhika Devi

Radhika Devi

Radhika Devi একজন সংবেদনশীল লেখক, যিনি প্রেমের উক্তি, বন্ধুত্বের উক্তি এবং দুঃখের উক্তির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে ছোঁয়া লাগান। তাঁর কথাগুলো সম্পর্কের গভীরতা, বন্ধুত্বের সৌন্দর্য ও জীবনের দুঃখ-কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করে। নাজিবুল ডট কম-এ তিনি মানবিক অনুভূতির সৌন্দর্য তুলে ধরছেন।

আমার সব আর্টিকেল

Your comment will appear immediately after submission.

মন্তব্য করুন