ভারতীয় ক্রিকেটে দ্রুত উত্থান হওয়া তরুণ অলরাউন্ডারদের মধ্যে অন্যতম হলেন নিতিশ কুমার রেড্ডি। তাঁর ডানহাতি আগ্রাসী ব্যাটিং এবং কার্যকরী মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং তাঁকে ঘরোয়া, আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH)-এর হয়ে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং পরবর্তীতে ভারতীয় দলে তাঁর অভিষেক প্রমাণ করে, তিনি ভারতের ক্রিকেটে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
নিতিশ কুমার রেড্ডি ব্যক্তিগত পরিচিতি
| বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
| পূর্ণ নাম | কাকি নিতিশ কুমার রেড্ডি |
| পছন্দের খেলোয়াড় | বিরাট কোহলি |
| জন্ম তারিখ | ২৬ মে ২০০৩ |
| জন্মস্থান | বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত (গাঞ্জুয়াকার থুঙ্গালম গ্রাম) |
| বর্তমান বাসস্থান (ঘর) | মধুরাওয়াড়া, বিশাখাপত্তনম |
| দেশের নাম | ভারত |
| উচ্চতা | ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (প্রায় ১.৭৮ মিটার) |
| ধর্ম | হিন্দু |
| পিতার নাম | মুত্যলা রেড্ডি |
| মাতার নাম | মানসা জ্যোতস্না |
| স্ত্রীর নাম | অবিবাহিত |
| ভূমিকা | অলরাউন্ডার |
| মোট মূল্য | ₹৬ কোটি |
| স্পনসর কোম্পানি | হাবলট,পুমাএমকে বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস,মাউন্টেন ডিউ, |
| কোচ | কুমার স্বামী |
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান
নিতিশ কুমার রেড্ডির ব্যাটিং পরিসংখ্যান
| ফরম্যাট | ম্যাচ | ইনিংস | মোট রান | সর্বোচ্চ স্কোর | ব্যাটিং গড় | স্ট্রাইক রেট | সেঞ্চুরি | হাফ-সেঞ্চুরি | চার | ছয় |
| টেস্ট | ৯ | ১৪ | ৩৮৬ | ১১৪ | ২৯.৬৯ | ৫৭.৬১ | ১ | ০ | ৮ | ৪ |
| ওয়ানডে (ODI) | ১ | ১ | ১৯ | ১৯* | ০ | ১৭২.৭৩ | ০ | ০ | ০ | ০ |
| টি২০ আন্তর্জাতিক (T20I) | ৪ | ৩ | ৯০ | ৭৪ | ২৪.৩৮ | ১৮০.০০ | ০ | ১ | ৩ | ২ |
| আইপিএল (IPL) | ২৮ | ২২ | ৪৮৫ | ৭৬* | ৩১.১০ | ১৪৭.৪১ | ৩ | ০ | ৪১ | ৩২ |
নিতিশ কুমার রেড্ডির বোলিং পরিসংখ্যান
| ফরম্যাট | ম্যাচ | ইনিংস | উইকেট | সেরা বোলিং | বোলিং গড় | ইকোনমি রেট | ৫ উইকেট | ক্যাচ |
| টেস্ট | ৯ | ১২ | ৮ | ২/৩২ | ৩৯.৬৩ | ৪.১৭ | ০ | ৪ |
| ওয়ানডে (ODI) | ১ | ১ | ১৯ | ০/১৬ | ০ | ৭.৩৮ | ০ | ০ |
| টি২০ আন্তর্জাতিক (T20I) | ৪ | ৪ | ৩ | ২/২৩ | ২৩.৬৬ | ৭.৮৯ | ০ | ২ |
| আইপিএল (IPL) | ২৮ | ১২ | ৫ | ২/১৭ | ৫০.৮০ | ১০.৯৬ | ০ | ১০ |
নিতিশ কুমার রেড্ডি আইসিসি র্যাঙ্কিং:
| বিভাগ | টেস্ট | T20 |
| ব্যাটিং র্যাঙ্কিং | ৭৮তম | 120তম |
| বোলিং র্যাঙ্কিং | ১০৬তম | ৩৯৫তম |
| অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিং | 61তম | ১১০তম |
জীবন সংগ্রাম ও ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু
শৈশব ও ক্রিকেটে আগমন
নিতিশ কুমার রেড্ডি ২০০৩ সালের ২৬ মে বিশাখাপত্তনমের (গাঞ্জুয়াকার থুঙ্গালম গ্রাম) একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মুত্যলা রেড্ডি হিন্দুস্তান জিঙ্কে চাকরি করতেন এবং মা মনসা জ্যোতস্না গৃহিণী। নিতিশ ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট পছন্দ করতেন এবং প্রায় ৬ বছর বয়স থেকে প্লাস্টিকের ব্যাট নিয়ে খেলা শুরু করেন। স্থানীয় হিন্দুস্তান জিঙ্ক মাঠে বড়দের খেলা দেখতে গিয়েই তাঁর ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তাঁর বাবা শুরু থেকেই চাইতেন যে নিতিশ একজন ক্রিকেটার হোক।
পিতার বলিদান ও আর্থিক সংগ্রাম
নিতিশের ক্রিকেট যাত্রায় তাঁর পিতা মুত্যলা রেড্ডির আত্মত্যাগ এক কিংবদন্তী গল্প।
- চাকরি ত্যাগ: ২০১২ সালে, নিতিশের বয়স যখন প্রায় ৯ বছর, তখন তাঁর বাবার চাকরি সূত্রে রাজস্থানের উদয়পুরে বদলি হয়। কিন্তু মুত্যলা রেড্ডি জানতে পারেন যে উদয়পুরে ক্রিকেটের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশিক্ষণ নেই, যা তাঁর ছেলের খেলার ক্ষতি করতে পারে। তাই, তিনি নিশ্চিত সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
- আর্থিক সমস্যা: চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর, মুত্যলা রেড্ডি ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট স্কিম (VRS)-এর প্রায় ₹২০ লাখ টাকা নিয়ে একটি মাইক্রোফিনান্সিং ব্যবসা শুরু করেন। দুর্ভাগ্যবশত, ব্যবসাটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটে পড়ে।
- সংকল্প: ১২ বছর বয়সে নিতিশ একদিন তাঁর আত্মীয়দের শুনতে পান, যারা তাঁর বাবার এই ব্যর্থ সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচনা করছেন। এই সময় তিনি তাঁর বাবাকে আর্থিকভাবে এবং সামাজিকভাবে সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেন। তিনি বুঝতে পারেন, ভারতের জার্সি পাওয়ার মাধ্যমেই তিনি এই কাজ করতে পারবেন। এই সময় পরিবারে প্রতি বছর একটি ভালো ক্রিকেট ব্যাটের জন্যেও সংগ্রাম করতে হতো।
ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু ও উত্থান
পিতার ত্যাগের পর, নিতিশ তাঁর ক্রিকেটকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন।
- প্রশিক্ষণ: তাঁর বাবা তাঁকে বিশাখাপত্তনম ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (VDCA) ক্যাম্পে ভর্তি করান। সেখানে তিনি কুমার স্বামী, কৃষ্ণ রাও এবং ওয়াটেকরের মতো কোচদের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।
- গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: প্রাক্তন ভারতীয় নির্বাচক এমএসকে প্রসাদের (MSK Prasad) নজর নিতিশের ওপর পড়ে এবং তিনি তাঁকে অন্ধ্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ACA) একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করেন।
- অনূর্ধ্ব-১৬ সাফল্য: ২০১৭-২০১৮ মরসুমে বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে নাগাল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪১৪ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস সহ ১,২৩৭ রান করে তিনি বিসিসিআইয়ের ‘বর্ষসেরা অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটার’ (জগমোহন ডালমিয়া পুরস্কার) সম্মাননা লাভ করেন।
অভিষেক ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
রেড্ডি আন্তর্জাতিক এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি স্তরে দ্রুত প্রভাব ফেলেছেন।
অভিষেকের তারিখ
| ফরম্যাট | তারিখ | বিরুদ্ধে | অভিষেকের পারফরম্যান্স |
| ওয়ানডে (ODI) | ১৯ অক্টোবর ২০২৫ | অস্ট্রেলিয়া | ১৯ বলে ১১ রান |
| টেস্ট | ২২ নভেম্বর ২০২৪ | অস্ট্রেলিয়া | ১১৪ রানের ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি |
| টি২০ আন্তর্জাতিক (T20I) | ৬ অক্টোবর ২০২৪ | বাংলাদেশ | ১৫ বলে ১৬ রান |
| আইপিএল (IPL) | মে ২০২৩ | রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB) | ব্যাট করার সুযোগ পাননি |
ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত:
- টেস্ট অভিষেক সেঞ্চুরি: ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (MCG) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে ১১৪ রানের সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান। সেঞ্চুরির পর তাঁর বাবার অশ্রুসিক্ত হওয়ার দৃশ্যটি ছিল এক আবেগময় মুহূর্ত।
- আইপিএল ‘ইমার্জিং প্লেয়ার’ (২০২৪): ২০২৪ সালের আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে তাঁর দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য তিনি ‘ইমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতে নেন।
আইপিএল ক্যারিয়ার
২০২৩ সালের নিলামে ₹২০ লাখ টাকায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH) তাঁকে কিনে নেয়। ২০২৪ সালে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে আবির্ভূত হন, যেখানে তিনি ৩০৩ রান করেন এবং ৩টি উইকেট নেন। তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং তাঁকে ভবিষ্যতের এক তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
আয় ও সম্পদ
ঘরোয়া ক্রিকেট, আইপিএল চুক্তির অর্থ এবং স্পনসরশিপ হল তাঁর আয়ের প্রধান উৎস। বর্তমানে তাঁর আনুমানিক মোট মূল্য ₹৬ কোটি।
উপসংহার
নিতিশ কুমার রেড্ডি ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন অলরাউন্ডার যুগের সূচনা করেছেন। একজন তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে এত কম সময়ে আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর প্রভাব অনবদ্য। তাঁর বাবার ত্যাগ এবং তাঁর নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ তিনি আজ ভারতীয় দলের হয়ে খেলছেন। ভবিষ্যৎ ভারতীয় টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি২০ দলের জন্য তাঁকে এক অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
নিতিশ কুমার রেড্ডি কবে জন্মগ্রহণ করেন?
২৬ মে, ২০০৩।
তিনি কয়টি বিশ্বকাপ জিতেছেন?
এখনও পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপ জেতেননি।
আইপিএলে কোন দলের হয়ে খেলেন?
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH)।
তাঁর বাবার নাম কী এবং তাঁর অবদান কী?
তাঁর বাবার নাম মুত্যলা রেড্ডি। ছেলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য তিনি নিজের নিশ্চিত সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন।
তাঁর উচ্চতা কত?
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি।
তিনি বর্তমানে কিসের সাথে যুক্ত?
তিনি একজন পেশাদার ক্রিকেটার এবং ভারতীয় জাতীয় দলের সদস্য।
Your comment will appear immediately after submission.