কোরবানী বা পশু জবেহ করা ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখে সম্পন্ন করা হয়। এটি ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের মহোৎসব এবং মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
“তোমরা তোমার প্রতিপালকের জন্য সালাত কায়েম করো এবং কোরবানী করো।”
(সুরা কাউসার: ২)
এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি ইবাদত ও কোরবানীর আদেশ একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কোরবানীর গুরুত্বকে প্রমাণ করে।
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে:
“কোনো পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (পরহেজগারি)।”
(সুরা হজ: ৩৭)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কোরবানির আসল উদ্দেশ্য পশু জবেহ নয়, বরং আল্লাহর প্রতি খাঁটি অনুগত্য ও তাকওয়া প্রকাশ।
হাদীসের আলোকে
রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরবানীকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন:
“আদম সন্তানের কোরবানির দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো — কোরবানী করা। কোরবানীর পশু কিয়ামতের দিন শিং, ক্ষুর ও পশমসহ নিয়ে উপস্থিত হবে। নিশ্চয়ই কোরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। সুতরাং খুশি মনে কোরবানি করো।”
(তিরমিজি: ১৪৯৩; হাদীস সহিহ)
এ হাদিসে কোরবানীর বিশেষ মর্যাদা ও এর প্রতিদান সম্পর্কে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।
আরেক হাদিসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
(ইবনে মাজাহ: ৩১২৩; হাদীস হাসান)
এটি কোরবানিকে তুচ্ছ মনে করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করা কত বড় গোনাহ তা বুঝিয়ে দেয়।
কোরবানীর শিক্ষা
কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা শিক্ষা গ্রহণ করে:
- আত্মত্যাগের চেতনা — নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর আদেশের সামনে বিসর্জন দেওয়া।
- তাকওয়া অর্জন — আল্লাহর জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকা।
- সম্পদে বরকত — কোরবানীর মাধ্যমে দান ও সহানুভূতির চর্চা।
- উম্মাহর সংহতি — ধনী-গরিব একসঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া।
উপসংহার
কোরবানী শুধু পশু জবেহ নয়, বরং এটি হচ্ছে আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বাস্তব রূপ। তাই আমাদের উচিত খুশি মনে কোরবানী আদায় করা এবং এর প্রকৃত শিক্ষা বাস্তব জীবনে ধারণ করা।