নবি মুম্বই, ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়াম, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ – আইসিসি মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৫-এর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবং স্বাগতিক ভারত। এই রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ৩৩৮ রানের এক বিশাল স্কোর খাড়া করে, যা তাড়া করতে নেমে ভারতীয় দল এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। জেমাইমা রডরিগেজ এবং হরমনপ্রীত কৌরের মতো তারকা খেলোয়াড়দের অসাধারণ পারফরম্যান্স এই ম্যাচটিকে এক ঐতিহাসিক মোড় এনে দেয়। এই ম্যাচেই মহিলা ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড রান তাড়ার নজির সৃষ্টি হয়। এই আর্টিকেলে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বিশাল রানের সংগ্রহ, দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ঐতিহাসিক ব্যাটিং পারফরম্যান্স, ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট এবং এই জয়ের তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথম ইনিংস: লিচফিল্ড-পেরির ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড়
টস জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার অ্যালিসা হিলি (Alyssa Healy) অল্প রান করে আউট হয়ে গেলেও, এরপর উইকেটে আসেন ফোয়েবে লিচফিল্ড (Phoebe Litchfield)। তিনি অভিজ্ঞ এলিস পেরি (Ellyse Perry)-র সঙ্গে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ১৫৫ রানের এক বিশাল পার্টনারশিপ গড়েন। এই জুটি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। লিচফিল্ড মাত্র ৯৩ বলে ১১৯ রানের এক বিস্ফোরক সেঞ্চুরি করেন।
এই পার্টনারশিপ ভাঙার পর পেরি ৭৭ রান করে আউট হন। এরপর অ্যাশলে গার্ডনার (Ashleigh Gardner) উইকেটে এসে তাহলিয়া ম্যাকগ্রা (Tahlia McGrath)-র সঙ্গে মিলে আরও একটি দ্রুতগতির পার্টনারশিপ গড়েন। গার্ডনার মাত্র ৪৫ বলে ৬৩ রানের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। অস্ট্রেলিয়া ৪৯.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায়।
ভারতের বোলারদের মধ্যে শ্রী চরণী এবং দীপ্তি শর্মা দুজনেই ২টি করে উইকেট পান। এছাড়াও, রাধিকা যাদব, রেণুকা সিং ঠাকুর এবং ক্রান্তি গৌড় প্রত্যেকে ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
- অস্ট্রেলিয়া স্কোরকার্ড: ৩৩৮ রান/১০ উইকেট/৪৯.৫ ওভার
দ্বিতীয় ইনিংস: জেমাইমার ধৈর্য এবং হরমনপ্রীতের আক্রমণ
৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের শুরুটা খুব খারাপ হয়। ওপেনার শেফালি ভার্মা ৮ এবং স্মৃতি মন্ধানা ২৪ দ্রুত আউট হয়ে যান এবং ভারতের স্কোর ৪৭ রানে ২ উইকেট হয়ে যায়।
এই কঠিন অবস্থায় দলের হাল ধরেন তরুণ তারকা জেমাইমা রডরিগেজ এবং অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। তারা দু’জন তৃতীয় উইকেটে মিলে ১৬৭ রানের এক বিশাল পার্টনারশিপ গড়েন, যা জয় নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি ছিল। হরমনপ্রীত কৌর ৮৮ বলে ৮৯ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে আউট হন। এরপর দ্রুতই দীপ্তি শর্মা ২৪ রান আউট হয়ে যান।
কিন্তু জেমাইমা ঠান্ডা মাথায় খেলতে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা তাঁকে ৮২ এবং ১০৬ রানে থাকার সময় দুটি সহজ ক্যাচ ফেলে দেন, যার সুযোগ নিয়ে জেমাইমা শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকেন এবং অপরাজিত ১২৭ রানের এক ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন। রিচা ঘোষ ২৬-এর মতো ব্যাটাররা শেষদিকে প্রয়োজনীয় রান যোগ করে। শেষ পর্যন্ত ভারত ৯ বল বাকি থাকতে ৩৪১ রান করে ৫ উইকেটে জয় লাভ করে।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড (Annabel Sutherland) ২টি উইকেট পান। এছাড়া কিম গারথ এবং অ্যাশলে গার্ডনার প্রত্যেকে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
- ভারত স্কোরকার্ড: ৩৪১ রান/৫ উইকেট/৪৮.৩ ওভার
- ভারত মহিলা দল ৫ উইকেট জিতে গেছে
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. জেমাইমা রডরিগেজের অপরাজিত ১২৭: চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে জেমাইমার এই ঐতিহাসিক অপরাজিত শতরানটি ছিল ভারতের জয়ের মূল ভিত্তি।
২. লিচফিল্ড-পেরির ১৫৫ রানের পার্টনারশিপ: প্রথম ইনিংসে এই জুটিই অস্ট্রেলিয়ার বিশাল স্কোরের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
৩. হরমনপ্রীত-জেমাইমা ১৬৭ রানের জুটি: এই বিশাল পার্টনারশিপটি ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে এবং বিশ্বরেকর্ড গড়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
৪. অ্যালিসা হিলির ক্যাচ মিস: জেমাইমা রডরিগেজ ৮২ রানে থাকার সময় ক্যাচ মিস হওয়াটি ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
৫. বিশ্বরেকর্ড রান তাড়া: মহিলা ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার বিশ্বরেকর্ড ৩৩৯ ভেঙে ভারতের জয় ছিল ম্যাচের সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ কে?
জেমাইমা রডরিগেজ (অপরাজিত ১২৭ রান)।
ফাইনাল ম্যাচের ব্যবধান কত ছিল?
ভারত ৫ উইকেটে জয়ী হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপ?
লিচফিল্ড ও পেরির ১৫৫ রানের জুটি।
ভারতের সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপ?
হরমনপ্রীত ও জেমাইমার ১৬৭ রানের জুটি।
ফাইনালে ভারতের খেলা কার সাথে?
দক্ষিণ আফ্রিকা।
 
			 
    
Your comment will appear immediately after submission.