আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে স্মার্টফোন এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। জীবনের যেকোনো মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দী করা এখন জলভাত! ছবি তোলা বা ভিডিও করা মুহূর্তের ব্যাপার। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আনন্দ-স্মৃতি ছাড়াও আজকাল অনেকে পাবলিক প্লেসে বা জনসমাগমস্থলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। ফেসবুক বা ইউটিউবের জন্য কনটেন্ট তৈরির উদ্দেশ্যেও এই প্রবণতা বাড়ছে। তবে হাতে ক্যামেরা আছে বলেই সব পরিস্থিতিতে যথেচ্ছভাবে ছবি বা ভিডিও ধারণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত? অন্যের অনুমতি ছাড়া তার ছবি বা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা কি ঠিক? আসুন জেনে নিই এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো।
আপনার ফ্রেমে অচেনা মুখ: কী করবেন?
ধরুন, আপনি প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অথবা গণপরিবহনে যাতায়াত করছেন এবং নিজের পরিবারের মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী করছেন। এই প্রক্রিয়াতেই আপনার ক্যামেরার ফ্রেমে অজান্তেই চলে আসতে পারে অনেক অচেনা মুখ। মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে বা চলমান সিঁড়িতেও অনেকে নিজের ফোন ক্যামেরা ব্যবহার করেন, যার ফলে আশপাশের বহু মানুষ ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়েন।
সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে সংযত হন
অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে পথে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা বা তল্লাশি করেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সংবাদমাধ্যম বা ইউটিউবারকে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে আপলোড করতে দেখা যায়। এভাবে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে সমাজে ওই গাড়িতে থাকা মানুষগুলোকে ঘিরে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত আলোচনা হতে পারে। তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই ভিডিও ধারণ ও আপলোড করার আগে এই ধরনের সংবেদনশীল দিকগুলো খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
জনপরিসরে ছবি বা ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে করণীয়:
জনসাধারণের ভিড়ে বা পাবলিক প্লেসে ক্যামেরা ব্যবহারের সময় চেষ্টা করুন, যেন ক্যামেরার ফ্রেমের ভেতর অচেনা কোনো মানুষ না থাকেন। যদি নিতান্তই এটি সম্ভব না হয়, তবে সেই অচেনা ব্যক্তির অংশটুকু কেটে দেওয়া বা ঘোলাটে করে দেওয়া উচিত। যদি আপনার ফ্রেমে অচেনা কাউকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তবে সেই ছবি বা ভিডিও কখনোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করবেন না। এমনকি যদি সেই অচেনা ব্যক্তিটি একটি শিশুও হয়, তাহলেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।
কিছু একটা ঘটছে? অতি উৎসাহী হবেন না!
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গাড়ি থামানোর মতো কোনো ঘটনা দেখলে অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে ছোটেন। নিজের মধ্যে এমন দৃশ্য ধারণের তাগিদ অনুভব করলে নিজেকে সংযত রাখুন। অন্যের বিষয়ে অতিরিক্ত কৌতূহল ভালো নয়। চারপাশে যা-ই ঘটুক, তার সবটা ধারণ করা অপ্রয়োজনীয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই অন্যের জন্য বিব্রতকর।
এমনকি কোনো মানবিক ঘটনা দেখলেও অনুমতি ছাড়া তা ধারণ করা উচিত নয়। ধরুন, কেউ পথে অসহায় মানুষদের খাবার বিতরণ করছেন। দৃশ্যটা আপনার ভালো লাগছে বলেই আপনি তা ধারণ করতে চাইলেন। এক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের (খাবার বিতরণকারী এবং যারা খাবার গ্রহণ করছেন) অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। তাঁদের কারো আপত্তি থাকলে এমন দৃশ্যও ধারণ করা ঠিক নয়। আপনি চাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটির কথা লিখতে পারেন, পরিচিতদের সঙ্গে সেই মানবিক গল্পটি ভাগ করে নিতে পারেন, কিন্তু ছবি বা ভিডিওর জন্য অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
নেতিবাচক পরিস্থিতিতে আপনার ভূমিকা
জীবনে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ও নেতিবাচক পরিস্থিতির সাক্ষী হতে পারেন আপনি। তবে কেউ কাউকে মারছেন এমন সহিংস দৃশ্য ধারণ করা কি খুব জরুরি? চোখের সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে আপনার মানবিক দায়িত্ব হলো তা থামাতে চেষ্টা করা। যদি একা না পারেন, তবে অন্যের সাহায্য নিন, বা জরুরি সহায়তার জন্য দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। এটা ঠিক যে, কিছু ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে আপনার ধারণ করা ভিডিও কাজে আসতে পারে। তবে সবাই তো আর সন্ত্রাসী নন। তাই যেকোনো ছবি ও ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে নিজের বিচার-বিবেচনা এবং মানবিকতা কাজে লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট (ভাবানুবাদ ও সংক্ষেপিত)