এশিয়া কাপের এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৪১ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে সুপার ফোর-এ নিজেদের স্থান পাকা করে নিয়েছে পাকিস্তান। এই ম্যাচে একদিকে ছিল পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের লড়াই, অন্যদিকে বোলারদের নিখুঁত পারফরম্যান্স। ম্যাচের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়ে সকলের নজর কেড়েছেন শাহীন আফ্রিদি, যিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেছেন।
পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংস: ফখরের হাফ সেঞ্চুরি এবং শাহীনের ক্যামিও
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরুতেই কিছুটা চাপে পড়ে। কিন্তু ওপেনার ফখর জামান দলের হাল ধরেন এবং ৩৬ বলে ৫০ রানের এক অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন, যা দলের একটি সম্মানজনক স্কোরের ভিত গড়ে তোলে। তার এই ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। ইনিংসের শেষদিকে দলের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন শাহীন আফ্রিদি, যিনি মাত্র ১৪ বলে ২৯ রানের একটি ঝড়ো অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার এবং ২টি ছক্কা, যা দলকে ১৪৬ রানে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
পাকিস্তান ব্যাটিং স্কোরকার্ড
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
সাহেবজাদা ফারহান | ৫ | ১২ | ০ | ০ | ৪১.৬৭ | c মুহাম্মদ জোহাইব b জুনায়েদ সিদ্দিকী |
সাইম আইয়ুব | ০ | ২ | ০ | ০ | ০.০০ | c মুহাম্মদ রোহিদ খান b জুনায়েদ সিদ্দিকী |
ফখর জামান | ৫০ | ৩৬ | ২ | ৩ | ১৩৮.৮৯ | c হারশিত কৌশিক b সিমরনজিৎ সিং |
সালমান আগা (C) | ২০ | ২৭ | ২ | ০ | ৭৪.০৭ | c হায়দার আলী b ধ্রুব পরাশর |
হাসান নওয়াজ | ৩ | ৪ | ০ | ০ | ৭৫.০০ | lbw b সিমরনজিৎ সিং |
খুশদিল | ৪ | ৬ | ০ | ০ | ৬৬.৬৭ | c মুহাম্মদ ওয়াসিম b সিমরনজিৎ সিং |
মোহাম্মদ হারিস (WK) | ১৮ | ১৪ | ৩ | ০ | ১২৮.৫৭ | b জুনায়েদ সিদ্দিকী |
মোহাম্মদ নওয়াজ | ৪ | ৫ | ০ | ০ | ৮০.০০ | c মুহাম্মদ ওয়াসিম b জুনায়েদ সিদ্দিকী |
শাহীন আফ্রিদি | ২৯* | ১৪ | ৩ | ২ | ২০৭.১৪ | অপরাজিত |
হারিস রউফ | ০ | ১ | ০ | ০ | ০.০০ | রান আউট (সিমরনজিৎ সিং/রাহুল চোপড়া) |
- অতিরিক্ত রান: ১৩ (ওয়াইড ৭, লেগ বাই ৫, নো বল ১)
- মোট:১৪৬ রান (৯ উইকেট, ২০ ওভার)
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বোলিং: জুনায়েদ সিদ্দিকীর দুর্দান্ত স্পেল
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বোলারদের মধ্যে জুনায়েদ সিদ্দিকী ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ৪টি উইকেট শিকার করে ম্যাচের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। এছাড়া, সিমরনজিৎ সিং ২৬ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বোলিং স্কোরকার্ড
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
জুনায়েদ সিদ্দিকী | ৪ | ০ | ১৮ | ৪ | ৪.৫০ |
মুহাম্মদ রোহিদ খান | ৪ | ০ | ৩৬ | ০ | ৯.০০ |
ধ্রুব পরাশর | ৪ | ০ | ৩৩ | ১ | ৮.২৫ |
হায়দার আলী | ৪ | ০ | ২৮ | ০ | ৭.০০ |
সিমরনজিৎ সিং | ৪ | ০ | ২৬ | ৩ | ৬.৫০ |
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাটিং: পাকিস্তানের বোলারদের দাপটে বিপর্যয়
১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সংযুক্ত আরব আমিরাত শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায় এবং নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। তাদের কোনো ব্যাটসম্যানই বড় পার্টনারশিপ গড়তে পারেননি। রাহুল চোপড়া ৩৫ রান করে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও বাকিদের ব্যর্থতায় দলটি ১৭.৪ ওভারেই মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্যাটিং স্কোরকার্ড
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
আলিশান শরাফু | ১২ | ৮ | ১ | ১ | ১৫০.০০ | b শাহীন আফ্রিদি |
মুহাম্মদ ওয়াসিম (C) | ১৪ | ১৫ | ২ | ০ | ৯৩.৩৩ | c মোহাম্মদ নওয়াজ b আবরার আহমেদ |
মুহাম্মদ জোহাইব | ৪ | ৯ | ০ | ০ | ৪৪.৪৪ | b সাইম আইয়ুব |
রাহুল চোপড়া (WK) | ৩৫ | ৩৫ | ১ | ১ | ১০০.০০ | c হাসান নওয়াজ b সালমান আগা |
ধ্রুব পরাশর | ২০ | ২৩ | ১ | ০ | ৮৬.৯৬ | c খুশদিল b হারিস রউফ |
আসিফ খান | ০ | ৪ | ০ | ০ | ০.০০ | b আবরার আহমেদ |
হারশিত কৌশিক | ০ | ১ | ০ | ০ | ০.০০ | c মোহাম্মদ হারিস b শাহীন আফ্রিদি |
হায়দার আলী | ৬ | ৬ | ১ | ০ | ১০০.০০ | c সাহেবজাদা ফারহান b হারিস রউফ |
সিমরনজিৎ সিং | ১ | ৪ | ০ | ০ | ২৫.০০ | রান আউট (সাহেবজাদা ফারহান) |
জুনায়েদ সিদ্দিকী | ০* | ০ | ০ | ০ | ০.০০ | অপরাজিত |
মুহাম্মদ রোহিদ খান | ২ | ১ | ০ | ০ | ২০০.০০ | রান আউট (হারিস রউফ/মোহাম্মদ হারিস) |
- অতিরিক্ত রান:১১ (ওয়াইড ৮, লেগ বাই ৩)
- মোট:১০৫ রান(১০ উইকেট, ১৭.৪ ওভার)
পাকিস্তানের বোলিং: সম্মিলিত দাপটে সহজ জয়
পাকিস্তানের বোলাররা সম্মিলিতভাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। শাহীন আফ্রিদি এবং হারিস রউফ দুজনেই ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া আবরার আহমেদ ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখেন। সাইম আইয়ুব এবং সালমান আগাও একটি করে উইকেট পেয়েছেন।
পাকিস্তান বোলিং স্কোরকার্ড
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
শাহীন আফ্রিদি | ৩ | ০ | ১৬ | ২ | ৫.৩৩ |
মোহাম্মদ নওয়াজ | ৩ | ০ | ২৭ | ০ | ৯.০০ |
হারিস রউফ | ২.৪ | ০ | ১৯ | ২ | ৭.১৩ |
আবরার আহমেদ | ৪ | ০ | ১৩ | ২ | ৩.২৫ |
সাইম আইয়ুব | ৪ | ০ | ১৮ | ১ | ৪.৫০ |
সালমান আগা (অধিনায়ক) | ১ | ০ | ৯ | ১ | ৯.০০ |
ম্যাচের ফলাফল ও তাৎপর্য
বিজয়ী: পাকিস্তান (৪১ রানে জয়ী) ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শাহীন আফ্রিদি ভেন্যু: দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. ফখর জামানের লড়াকু হাফ সেঞ্চুরি: ম্যাচের শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারানোর পর ফখর জামানের ৫০ রানের ইনিংসটি ছিল পাকিস্তানের জয়ের ভিত্তি।
২. জুনায়েদ সিদ্দিকীর ৪ উইকেট শিকার: সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই বোলার মাত্র ১৮ রান দিয়ে পাকিস্তানের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন, যা তাদের স্কোরকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে সাহায্য করে।
৩. শাহীন আফ্রিদির ম্যাচ-জয়ী অলরাউন্ড পারফরম্যান্স: মাত্র ১৪ বলে ২৯* রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পর বোলিংয়েও ২ উইকেট নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন, যার জন্য তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
৪. আবরার আহমেদের অসাধারণ বোলিং: আবরার আহমেদ ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর দারুণ চাপ সৃষ্টি করে।
৫. পাকিস্তানের সম্মিলিত বোলিং দাপট: লক্ষ্য ছোট হলেও পাকিস্তানের বোলাররা সম্মিলিতভাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১০৫ রানে অলআউট করে দেন, যা তাদের জয়ের পথ সহজ করে তোলে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
ম্যাচে কে জিতেছে এবং কত রানে?
এই ম্যাচে পাকিস্তান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৪১ রানে হারিয়েছে।
এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান কে করেছেন?
পাকিস্তানের ফখর জামান ৩৬ বলে ৫০ রান করে এই ম্যাচে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন।
এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি উইকেট কে পেয়েছেন?
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জুনায়েদ সিদ্দিকী ৪টি উইকেট নিয়েছেন, যা এই ম্যাচে সর্বোচ্চ।
এই ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ অ্যাওয়ার্ড কে পেয়েছিলেন?
শাহীন আফ্রিদি তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।
ম্যাচটি কোন স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছিল?
এই ম্যাচটি দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
Your comment will appear immediately after submission.