স্কাই স্টেডিয়াম, ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড, ১ নভেম্বর, ২০২৫ – তিন ম্যাচের একদিনের আন্তর্জাতিক (ODI) সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে স্কাই স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড। একটি লো-স্কোরিং ম্যাচে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপের শুরুতেই ভেঙে পড়া, লোয়ার অর্ডারে জেমি ওভারটন-এর দুর্দান্ত একক লড়াই এবং রান তাড়া করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডারের চ্যালেঞ্জ—এই সব মিলে ম্যাচটি ছিল খুবই নাটকীয়। বিশেষ করে শেষদিকে ব্লেয়ার টিকনার ও জ্যাকারি ফকস-এর স্নায়ু-চাপ জয় এই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে এবং এই জয় নিউজিল্যান্ডকে ৪১ বছর পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব এনে দেয়। এই আর্টিকেলে ইনিংস দুটির বিস্তারিত বিশ্লেষণ, পার্টনারশিপের খুঁটিনাটি এবং ম্যাচের সেরা মুহূর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রথম ইনিংস: ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ভরাডুবি এবং জেমি ওভারটনের ঐতিহাসিক লড়াই
টসে জয়ী নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
নিউজিল্যান্ডের পেসারদের সুনির্দিষ্ট ও সুইং বোলিংয়ের সামনে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং শুরু থেকেই মুখ থুবড়ে পড়ে। নিউজিল্যান্ডের নতুন বলের জুটি জ্যাকারি ফকস (২/২৭) এবং জেকব ডাফি (৩/৫৬) মিলে প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ভেঙে দেন। জেমি স্মিথ ৭, জো রুট ২, বেন ডাকেট ৮, হ্যারি ব্রুক ৬ এবং জ্যাকব বেথেল ১১-এর মতো প্রথম ৫ জন ব্যাটার মিলে মাত্র ৪৪ রান করেন। একসময় ইংল্যান্ডের স্কোর ১০.১ ওভারে ৪৪ রানে ৫ উইকেট হয়ে যায়।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন উইকেটরক্ষক জস বাটলার ৩৮ এবং স্যাম কুরান ১৭। তারা ষষ্ঠ উইকেটে ৫৩ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন। তবে বাটলার ও কুরান দ্রুত আউট হলে স্কোর দাঁড়ায় ২৩.১ ওভারে ১০২ রানে ৭ উইকেট। এখান থেকেই দলের অলরাউন্ডার জেমি ওভারটন ৬৮ এবং ব্রাইডন কার্স ৩৬ মিলে অষ্টম উইকেটে ৫৮ রানের দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়ে দলকে ২২০ রানের গণ্ডি পার করান। ওভারটন তাঁর প্রথম ওডিআই অর্ধশতরান (Maiden ODI Half-Century) হাঁকিয়ে ৬২ বলে ৬৮ রান করে ইনিংসের শেষদিকে আউট হন। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৪০.২ ওভারে ২২২ রানে।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে ব্লেয়ার টিকনার ৪ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে ৪টি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া, জেকব ডাফি ৩টি উইকেট এবং জ্যাকারি ফকস ২টি উইকেট পান।
- ইংল্যান্ড স্কোরকার্ড: ২২২ রান/১০ উইকেট/৪০.২ ওভার
দ্বিতীয় ইনিংস: নিউজিল্যান্ডের স্নায়ু-চাপ জয় করে ঐতিহাসিক জয়
জয়ের জন্য ২২৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামে নিউজিল্যান্ড। শুরু থেকেই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ৩৪ এবং রচিন রবীন্দ্র ৪৬ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং না করে সতর্কভাবে খেলেন। তারা প্রথম উইকেটে ৭৮ রানের একটি দৃঢ় পার্টনারশিপ গড়েন। রচিন রবীন্দ্র ৩৭ বলে ৪৬ রানের দ্রুত ইনিংস খেলেন।
এরপর ড্যারিল মিচেল ৪৪ দলের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান। মিচেল ও স্যান্টনার ২৭ দলকে লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে গেলেও, শেষদিকে উইকেট পড়তে থাকে। মিচেল আউট হওয়ার পর স্কোর দাঁড়ায় ৩৮.৩ ওভারে ১৯৪ রানে ৮ উইকেট।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে দলের লোয়ার অর্ডারে আসেন জ্যাকারি ফকস ১৪* এবং ব্লেয়ার টিকনার ১৮*। তারা কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, ঠান্ডা মাথায় খেলেন এবং নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয় এনে দেন। নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ৪৪.৪ ওভারে ২২৬/৮ রান তুলে ২ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে।
ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে জেমি ওভারটন (২/৩২) এবং স্যাম কুরান (২/৪৬) প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
- নিউজিল্যান্ড স্কোরকার্ড: ২২৬ রান/৮ উইকেট/৪৪.৪ ওভার
- নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী হয়েছে (৩২ বল বাকি থাকতে)
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. ঐতিহাসিক হোয়াইটওয়াশ: নিউজিল্যান্ড ৪১ বছর পর ইংল্যান্ডকে ওডিআই সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করল।
২. জেমি ওভারটনের লড়াই: দলের চরম ব্যর্থতার দিনেও ওভারটনের ৬২ বলে ৬৮ রানের প্রথম ওডিআই অর্ধশতরানটি ছিল ইংল্যান্ডের ইনিংসের ভিত্তি।
৩. টিকনার-ফকস এর জয়সূচক জুটি: মাত্র ২৭ রানের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে নিউজিল্যান্ডকে জয় এনে দেন এই জুটি।
৪. ব্লেয়ার টিকনারের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স: বোলিংয়ে ৪ উইকেট এবং ব্যাটিংয়ে অপরাজিত ১৮ রান করে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন।
৫. ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের পতন: মাত্র ১০.১ ওভারে ইংল্যান্ডের ৪৪ রানে ৫ উইকেট হারানো, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ কে?
ব্লেয়ার টিকনার (বোলিংয়ে ৪/৬৪ এবং ব্যাটিংয়ে ১৮*)।
কত বছর পর হোয়াইটওয়াশ?
নিউজিল্যান্ড ৪১ বছর পর ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল।
নিউজিল্যান্ড কত উইকেটে জয়ী হয়েছে ?
নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী হয়েছে (৩২ বল বাকি থাকতে)।
এই সিরিজের ফলাফল কী?
নিউজিল্যান্ড এই ম্যাচ জিতে সিরিজে ৩-০ তে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে।
ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোরার?
জেমি ওভারটন (৬৮ রান)।
Your comment will appear immediately after submission.