মাউন্ট মঙ্গানুই, বে ওভাল, অক্টোবর ২৬, ২০২৫ – নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ছিল ইংল্যান্ড দলের জন্য এক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালের এই লড়াইয়ে পরাজিত হলো হ্যারি ব্রুকের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দল। অক্টোবর ২৬, ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে হ্যারি ব্রুকের লড়াকু ১৩৫ রানের ইনিংস সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ডের তরুণ ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল ও মাইকেল ব্রেসওয়েলের দুর্দান্ত ইনিংস ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল। ইংল্যান্ডের নতুন ওডিআই অধিনায়ক হিসেবে হ্যারি ব্রুককে তাঁর প্রথম সিরিজেই পরাজয়ের তেতো স্বাদ নিতে হলো। ম্যাচের বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো:
প্রথম ইনিংস: হ্যারি ব্রুক দুর্দান্ত সেঞ্চুরি
টস জিতে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি ২/৫৩ প্রথম বলেই জেমি স্মিথকে আউট করার পর তরুণ ফাস্ট বোলার জাকারি ফাউকস ৪/৪১-এর দাপটে ইংল্যান্ডের টপ-অর্ডার ভেঙে পড়ে। তিনি বেন ডাকেট, জো রুট এবং স্যাম কারানের মতো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। ইংল্যান্ড মাত্র ৫৬ রানে ৬টি উইকেট হারিয়ে ফেলে।
চরম বিপর্যয়ের মুখে দলের হাল ধরেন নতুন অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক (Harry Brook)। অলরাউন্ডার জেমি ওভারটন ৪৬-এর সঙ্গে ব্রুক ৮৭ রানের মূল্যবান পার্টনারশিপ গড়ে দলকে কিছুটা সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দেন। বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করে হ্যারি ব্রুক তাঁর কেরিয়ারের সেরা ইনিংস খেলেন। ১০১ বলে ৯টি চার ও ১১টি ছক্কার সাহায্যে ১৩৫ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন তিনি। ব্রুকের এই একক লড়াই সত্ত্বেও, নিউজিল্যান্ডের বোলারদের দাপটে ইংল্যান্ড দল ৩৫.২ ওভারে মাত্র ২২৩ রানে অলআউট হয়ে যায়।
- ইংল্যান্ডের স্কোরকার্ড: ২২৩/১০/৩৫.২ ওভার
দ্বিতীয় ইনিংস: কেন উইলিয়ামসন গোল্ডেন ডাক
২২৪ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড শুরুতেই ধাক্কা খায়। ইংলিশ পেসার ব্রাইডন কার্স ৩/৪৫ এক ওভারে উইল ইয়াং ও কেন উইলিয়ামসনকে ০ রানে (গোল্ডেন ডাক) আউট করেন। ফলে নিউজিল্যান্ড মাত্র ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়।
কিন্তু মিডল অর্ডারে হাল ধরেন ড্যারিল মিচেল (Daryl Mitchell) এবং মাইকেল ব্রেসওয়েল (Michael Bracewell)। মিচেল ও ব্রেসওয়েল পঞ্চম উইকেটে ৯২ রানের একটি ম্যাচ জেতানো পার্টনারশিপ গড়ে নিউজিল্যান্ডকে খেলায় ফেরান। ব্রেসওয়েল ৫১ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৫১ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। এরপর ড্যারিল মিচেল ৯১ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে অপরাজিত ৭৮ রানের এক দৃঢ় ইনিংস খেলেন এবং নিউজিল্যান্ডকে জয় এনে দেন।
ইংল্যান্ড বোলারদের মধ্যে ব্রাইডন কার্স ৩টি এবং লুক উড ও আদিল রশিদ ১টি করে উইকেট নিলেও, নিউজিল্যান্ড ৩৬.৪ ওভারেই ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
- নিউজিল্যান্ডের স্কোরকার্ড: ২২৪/৬/৩৬.৪ ওভার
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. হ্যারি ব্রুকের অবিশ্বাস্য ১৩৫: দলের চরম বিপর্যয়ের ৫৬রানে ৬উইকেট সময় ব্রুকের ১০১ বলে ১৩৫ রানের ইনিংসটি ইংল্যান্ডকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দেয়।
২. জাকারি ফাউকস-এর বিধ্বংসী ৪ উইকেট: নিউজিল্যান্ডের এই তরুণ পেসার মাত্র ৪১ রান খরচ করে ইংল্যান্ডের টপ-অর্ডারের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন।
৩. মিচেল-ব্রেসওয়েলের ৯২ রানের জুটি: ২৪রানে ৩উইকেট হয়ে যাওয়ার পর ড্যারিল মিচেল ৭৮* এবং মাইকেল ব্রেসওয়েলের ৫১ মধ্যে গড়ে ওঠা ৯২ রানের এই পার্টনারশিপটি নিউজিল্যান্ডের জয়ের মূল ভিত্তি তৈরি করে।
৪. উইলিয়ামসনের ‘গোল্ডেন ডাক’: প্রায় ৮ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ তারকা কেন উইলিয়ামসন প্রথম বলেই আউট হন, যা ম্যাচের একটি অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত ছিল।
৫. প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: হ্যারি ব্রুক: ম্যাচটি নিউজিল্যান্ড জিতলেও, তাঁর অবিশ্বাস্য ১৩৫ রানের ইনিংসের জন্য হ্যারি ব্রুক ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার পান।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
সিরিজের ফল কী?
নিউজিল্যান্ড এই ম্যাচে ৪ উইকেটে জেতার পর সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ কে?
হ্যারি ব্রুক (১৩৫ রান)।
উইলিয়ামসনের স্কোর কত ছিল?
০ রানে আউট (‘গোল্ডেন ডাক’)।
নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোরার?
ড্যারিল মিচেল (অপরাজিত ৭৮ রান)।
ইংল্যান্ডের পক্ষে সেরা বোলার?
জাকারি ফাউকস (৪/৪১)।
ব্রুক-ওভারটনের জুটি কত রানের?
৮৭ রানের (সপ্তম উইকেটে)।
নিউজিল্যান্ড কত ওভার বাকি থাকতে জেতে?
১৩.২ ওভার বাকি থাকতে জেতে (৩৮.৪ ওভারের পরিবর্তে ৩৬.৪ ওভারে)।
Your comment will appear immediately after submission.