অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল ভারতীয় দলের জন্য মাস্ট উইন জিততেই হবে ম্যাচ। কিন্তু অ্যাডিলেড ওভালের এই লড়াইয়েও পরাজিত হলো শুভমন গিলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। ২৩ অক্টোবর, ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে রোহিত শর্মার লড়াকু ৭৩ রান এবং শ্রেয়স আইয়ারের ৬১ রানের ইনিংস সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ব্যাটসম্যান কুপার কনোলি ও ম্যাথু শর্টের দুর্দান্ত ইনিংস ভারতকে ২ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে নিল। ভারতের নতুন ওডিআই অধিনায়ক হিসেবে শুভমন গিলকে তাঁর প্রথম সিরিজেই পরাজয়ের তেতো স্বাদ নিতে হলো। ম্যাচের বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো:
প্রথম ইনিংস: রোহিত-শ্রেয়সের প্রতিরোধ, মাঝের ওভারে জাম্পার দাপট
টস জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শ ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। অস্ট্রেলিয়ান পেসার জেভিয়ার বার্টলেটের সামনে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। মাত্র ১৭ রানেই অধিনায়ক শুভমন গিল ৯ এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় ধাক্কা হিসেবে বিরাট কোহলি টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ বলে শূন্য রানে ০ আউট হয়ে যান।
চাপের মুখে ইনিংসের হাল ধরেন অভিজ্ঞ রোহিত শর্মা এবং শ্রেয়স আইয়ার। দু’জনের ব্যাটে আসে ১১৮ রানের মূল্যবান পার্টনারশিপ। হিটম্যান রোহিত শর্মা ৯৭ বলে ৭৩ রানের একটি দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন ৭টি চার ও ২টি ছয়। অন্যদিকে, ফর্মে থাকা শ্রেয়স আইয়ার ৭৭ বলে ৬১ রান করে আউট হন।
তবে, মাঝের ওভারে স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা তাঁর স্পিনের জাদু দেখান এবং ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের রানের গতি পুরোপুরি থামিয়ে দেন। এরপরও অক্ষর প্যাটেলের ৪১ বলে ৪৪ রানের কার্যকরী ইনিংস এবং হর্ষিত রানার ২৪* দ্রুত রান তোলার সুবাদে ভারত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬৪ রানের লড়াকু স্কোর খাড়া করে।
- ভারতের স্কোরকার্ড: (২৬৪/৯ ৫০ ওভার)
দ্বিতীয় ইনিংস: অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে শর্ট-কনোলির দৃঢ়তা ও ২ উইকেটের জয়
২৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা সাবধানী শুরু করে। মিচেল মার্শ এবং ট্রাভিস হেডের উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে ভারতীয় বোলাররা চাপ সৃষ্টি করলেও, অস্ট্রেলিয়ার তরুণরা সেই চাপ সামলে নেন।
ম্যাট রেনশ ৩০ এবং ম্যাথু শর্ট মিলে দলের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান। ভারতীয় ফিল্ডারদের দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাথু শর্ট ৭৮ বলে ৭৪ রানের এক দারুণ ইনিংস খেলেন।
শর্ট আউট হওয়ার পর খেলার রাশ ধরেন তরুণ কুপার কনোলি। ছয় নম্বরে নেমে তিনি ৫৩ বলে অপরাজিত ৬১ রানের এক অসাধারণ ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন ৫টি চার ও ১টি ছয়। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মিচেল ওয়েন ২৩ বলে ৩৬। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে আর্শদীপ সিং ২/৪০, হর্ষিত রানা ২/৫৯ এবং ওয়াশিংটন সুন্দর ২/৪২ প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট পেলেও, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিতে না পারার খেসারত দিতে হয়। কনোলি দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন, আর ২২ বল বাকি থাকতেই ২ উইকেটে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
- অস্ট্রেলিয়ার স্কোরকার্ড: (২৬৫/৮ ৪৬.২ ওভার)
ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. বিরাট কোহলির টানা দুই ম্যাচে ০: প্রত্যাবর্তনের সিরিজে বিরাট কোহলির টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শূন্য রানে ৪ বলে ০ আউট হওয়া ছিল ম্যাচের অন্যতম আলোচিত মুহূর্ত। এই ধাক্কাই ভারতীয় ইনিংসে শুরুতেই বড় চাপ সৃষ্টি করে।
২. রোহিত-শ্রেয়স জুটির প্রতিরোধ: মাত্র ১৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর রোহিত শর্মা ৭৩ এবং শ্রেয়স আইয়ারের ৬১, ১১৮ রানের জুটি ভারতীয় ইনিংসের ভিত্তি স্থাপন করে এবং দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
৩. অ্যাডাম জাম্পার স্পিন দাপট: অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা তাঁর ১০ ওভারে মাত্র ৬০ রান দিয়ে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন, যার মধ্যে শ্রেয়স আইয়ারের উইকেটটিও ছিল। মাঝের ওভারে তাঁর এই স্পেল ভারতের রানের গতি কমিয়ে দেয়।
৪. কুপার কনোলির ফিনিশিং টাচ: মাত্র ২১ বছর বয়সী কুপার কনোলি ছয় নম্বরে নেমে ৫৩ বলে অপরাজিত ৬১ রানের এক অসাধারণ, পরিণত ইনিংস খেলেন। চাপের মুহূর্তে তাঁর এমন পারফরম্যান্স অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ের মূল কারণ।
৫. গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস: অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ম্যাথু শর্ট দু’বার জীবন পান যখন ভারতীয় ফিল্ডাররা তাঁর ক্যাচ ফেলে দেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শর্ট ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন, যা অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথ মসৃণ করে দেয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
এই ম্যাচের পর ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ফল কী দাঁড়াল?
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচে ২ উইকেটে জেতার পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে থেকে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল।
বিরাট কোহলি কি ওডিআইতে প্রথমবার টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন?
হ্যাঁ। ওডিআই ক্রিকেটে এটিই প্রথমবার যখন বিরাট কোহলি টানা দুই ইনিংসে পারথ ও অ্যাডিলেড শূন্য রানে আউট হলেন।
ভারতের হয়ে কোন বোলার সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন?
ভারতের হয়ে আর্শদীপ সিং, হর্ষিত রানা এবং ওয়াশিংটন সুন্দর প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন।
এই ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ অ্যাওয়ার্ড কে পেয়েছিল
অ্যাডাম জাম্পা তিনি (১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেয়)।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে জয়ের মূল ভিত্তি গড়ে দিলেন কে?
ম্যাথু শর্ট ৭৪ এবং তরুণ কুপার কনোলির অপরাজিত ৬১ ইনিংস অস্ট্রেলিয়ার জয়ের মূল ভিত্তি গড়ে তোলে। কনোলি সর্বকনিষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে দেশের মাটিতে ওডিআইতে হাফসেঞ্চুরি করার রেকর্ডও গড়েন।
দ্বিতীয় ওডিআইতে ভারতের দুর্বল দিক কী ছিল?
ভারতের দুর্বল দিক ছিল টপ অর্ডারের দ্রুত পতন, মিডল ওভারে অ্যাডাম জাম্পার সামনে রান করার অক্ষমতা এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ফেলার মতো খারাপ ফিল্ডিং বিশেষ করে ম্যাথু শর্টের ক্ষেত্রে।
Your comment will appear immediately after submission.