ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশী গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল অবশেষে সেই নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, যিনি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন, ২০২৫) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাঁদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এই সময় নোবেল ও নববধূর পাশাপাশি উভয়ের পক্ষ থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালতের অনুমতি ও কারা কর্তৃপক্ষের তদারকি
এর আগে, ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশী গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেলকে বিয়ের অনুমতি দেন আদালত। নোবেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বুধবার (১৮ জুন, ২০২৫) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার এই আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলা মনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন এবং এসআই ইলা মনি সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, ধর্ষণ মামলার বাদী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, আসামি নোবেলের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে বিয়ের অনুমতি চাওয়া হয়। বাদী ও আসামি উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
কারা ফটকে অনুষ্ঠিত এই বিয়েতে গায়ক নোবেল এবং তাঁর স্ত্রীর পক্ষে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঘনিষ্ঠজন নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, খলিলুর রহমান এবং সাদেক উল্লাহ ভুইয়া।
আগের অভিযোগ ও আইনি প্রক্রিয়ায় নোবেল
ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত ২০ মে থেকে কারাগারে আছেন গায়ক নোবেল। গ্রেপ্তারের দিন নোবেলের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছিলেন যে, অভিযোগকারী নারী তাঁর স্ত্রী এবং তিনি কোনো ধর্ষণ করেননি। তবে, ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করলেও আদালতে কোনো কাবিননামা জমা দিতে পারেননি নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন। নোবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি সাত মাস ধরে ওই নারীকে একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, “কণ্ঠশিল্পী নোবেল ওই নারীকে বিয়ে করেছেন, এমন কোনো কাগজপত্র আমাদের কাছে জমা দিতে পারেননি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ীর কোনো একটি বাসায় ওই নারীর সঙ্গে নোবেলের মৌখিকভাবে বিয়ে পড়ানোর একটি ঘটনা রয়েছে; কিন্তু বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রি কাবিননামা নেই।”
ডেমরা থানার পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল, সাত বছর আগে (২০১৮ সালে) ফেসবুকের মাধ্যমে নোবেলের সাথে ওই নারীর পরিচয় হয়। তিনি মোহাম্মদপুরের একটি ভাড়া বাসায় থেকে রাজধানীর একটি কলেজে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করতেন। তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা চলতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর ডেমরায় নোবেলের স্টুডিও দেখানোর জন্য ওই নারীকে ডেকে নেওয়া হয়। রাত আটটার দিকে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে নোবেল তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেন এবং পরে তা ভেঙে ফেলেন। এরপর তাঁকে ধর্ষণ করেন এবং সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন নোবেল। পরবর্তীতে ভয় দেখিয়ে সাত মাস ধরে ওই বাসায় তাঁকে আটকে রাখা হয়।
পুলিশ আদালতকে আরও জানায়, ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাঁর মা-বাবা ঢাকায় আসেন। এরপর ওই নারীকে নোবেলের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ মে ভুক্তভোগী নারী নোবেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
নোবেলের বিতর্কিত অতীত
জি বাংলার রিয়েলিটি শো সারেগামাপায় অংশ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন গোপালগঞ্জের ছেলে নোবেল। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়েই তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য তাঁকে সমালোচনার মুখে ফেলে। এরপর একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কের কারণেও নোবেলকে ঘিরে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। চলচ্চিত্রে গান গেয়ে আলোচনায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হলেও এসব বিতর্ক সব ম্লান করে দেয়।