সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

প্রকাশিত হয়েছে: 23 মে, 2025 দ্বারা Taibur Rahman
✅ বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত
5/5 - (1 vote)

বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বেড়েছে সাইবার হুমকি ও অপরাধের সংখ্যাও। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের “সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ” (Cyber Security Ordinance 2025) বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত পদক্ষেপ।


গত এক দশকে দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যাপক উন্নয়ন লাভ করেছে। ই-গভর্ন্যান্স, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সাইবার অপরাধ যেমন ডেটা চুরি, হ্যাকিং, স্ক্যাম, র‍্যানসমওয়্যার হামলা ও ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও একটি আধুনিক ও কার্যকর সাইবার নিরাপত্তা কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে প্রণয়ন করা হয়েছে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫


অধ্যাদেশটির মূল বৈশিষ্ট্য:

  1. সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি গঠন: একটি স্বাধীন জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা (Bangladesh Cyber Security Agency – BCSA) গঠনের কথা বলা হয়েছে, যারা রাষ্ট্রীয়, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সংস্থাগুলোর সাইবার সুরক্ষায় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবে।
  2. সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা দণ্ডনীয়তা: হ্যাকিং, ফিশিং, ডেটা চুরি, স্প্যামিং, অননুমোদিত প্রবেশ, এবং ডিজিটাল জালিয়াতিকে স্পষ্টভাবে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সংশ্লিষ্ট সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে।
  3. গোপনীয়তা তথ্য সুরক্ষা: ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কঠোর বিধান রাখা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার বা হস্তান্তরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
  4. সার্টিফাইড সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
  5. সাইবার হুমকি প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা: জরুরি প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি সাইবার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (CERT) গঠনের কথা বলা হয়েছে।

প্রাসঙ্গিকতা চ্যালেঞ্জ:

প্রাসঙ্গিকতা

  • ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নিরাপদ সাইবার পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
  • বেসরকারি খাত, বিশেষ করে ব্যাংকিং ও ই-কমার্সে সাইবার ঝুঁকি হ্রাস করা।
  • আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি নিরাপদ ডিজিটাল কাঠামো সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

চ্যালেঞ্জ

  • দক্ষ জনবল ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাব।
  • ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা।
  • আইনের অপব্যবহার ঠেকাতে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ একটি যুগোপযোগী আইন যা বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দক্ষ জনবল, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং নাগরিকদের সচেতনতা। সঠিকভাবে প্রয়োগ হলে এটি ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।

Avatar of Taibur Rahman

Taibur Rahman

আমি তৈয়বুর রহমান। লেখা আমার অভ্যাস নয়, এটা আমার প্রকাশের মাধ্যম। নাজিবুল ডটকমে আমি এমন কন্টেন্ট তৈরি করি যা শুধু তথ্য দেয় না, চিন্তার খোরাকও যোগায়। লক্ষ্য একটাই – জটিল বিষয়কে সহজ করে পাঠকের মনে গেঁথে যাওয়া।

আমার সব আর্টিকেল

মন্তব্য করুন