ইতিহাস গড়া ‘স্পিন-ফেস্ট’: বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ওয়ানডে

প্রকাশিত হয়েছে: দ্বারা
🌐 Language: BN | Isolated: ✅
✅ বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত
5/5 - (1 vote)

বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার এই ওয়ানডে ম্যাচটি ক্রিকেট ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল এমন এক কৌশল নিয়েছিল, যা ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আগে কখনও ঘটেনি: তারা পুরো ৫০ ওভার স্পিনারদের দিয়ে বোলিং করিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। শুধু রেকর্ডই নয়, ম্যাচটি টাই হওয়ার পর রোমাঞ্চ গড়ায় সুপার ওভারে, যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শ্বাসরুদ্ধকর ১ রানের জয় ছিনিয়ে নেয়। কপিল দেব বা গিলক্রিস্টের ফাইনালের মতোই নাটকীয়তা নিয়ে আসা এই ম্যাচটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো।

প্রথম ইনিংস: বাংলাদেশের লড়াকু স্কোর

টসে জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। মিরপুরের চিরাচরিত মন্থর ও শুষ্ক উইকেটে ক্যারিবিয়ান স্পিনারদের দাপটে বাংলাদেশের টপ অর্ডার বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল এই ম্যাচে এক অভূতপূর্ব কৌশল অবলম্বন করে – ৫০ ওভারের পুরোটা স্পিনারদের দিয়ে বোলিং করিয়ে তারা একদিনের ক্রিকেটে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে।

Advertisements

বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনার সৌম্য সরকার ৮৯ বলে ৪৫ রানের একটি ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন। তবে ইনিংসের শেষের দিকে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ (অপরাজিত ৩২) এবং লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেনের (অপরাজিত ৩৯) ব্যাটে আসে বিস্ফোরক গতি। রিশাদ মাত্র ১৪ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কা মেরে ৩৯ রানের একটি বিধ্বংসী ক্যামিও খেলেন, যার ফলে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রানের লড়াকু লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে গুডাকেশ মোতি ৩টি এবং আকিল হোসেইন ও অ্যালিক অ্যাথানাজে ২টি করে উইকেট নেন। বিশেষ করে অ্যাথানাজে ১০ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ স্কোরকার্ড: ২১৩ রান/৭ উইকেট/৫০ ওভার

দ্বিতীয় ইনিংস: ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে স্পিন-জুজু ও টাই

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজও বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে চাপের মুখে পড়ে। দলের অধিনায়ক শাই হোপ একদিকে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু অন্য প্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে ক্যারিবিয়ানরা।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা রিশাদ হোসেন আবারও তার স্পিনের জাদু দেখান। তিনি ৪২ রান দিয়ে ৩টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া নাসুম আহমেদ ও তানভীর ইসলাম ২টি করে উইকেট পান।

একসময় ১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে গিয়েছিল। কিন্তু অধিনায়ক শাই হোপ ৬৭ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করে এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যান। শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য ৩ রান প্রয়োজন ছিল এবং শেষ বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের একটি সহজ ক্যাচ মিস হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ রান নিয়ে নেয়। ফলে উভয় দলের স্কোর ২১৪ রানে সমান হয়ে ম্যাচটি টাই হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরকার্ড: ২১৩ রান/৯ উইকেট/৫০ ওভার

সুপার ওভারের শ্বাসরুদ্ধকর সমাপ্তি

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল প্রথম টাই হওয়া ম্যাচ। ম্যাচের ফয়সালার জন্য খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।

সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেটে ১০ রান করে। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে রিশাদ হোসেনকে না পাঠিয়ে সৌম্য সরকারকে পাঠায়, যা সমালোচিত হয়। বাংলাদেশের দরকার ছিল ১১ রান। আকিল হোসেইনের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৯ রানে থেমে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ রানের ব্যবধানে সুপার ওভারে জয়ী হয় এবং সিরিজে ১-১ সমতা ফেরায়।


ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত

এই ঐতিহাসিক ম্যাচের কিছু স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নিচে তুলে ধরা হলো:

১. ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫০ ওভার স্পিন: একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথম কোনো দল তাদের ৫০ ওভারের পুরোটা স্পিনারদের দিয়ে বল করাল। এটি ছিল মিরপুরের ঘূর্ণি উইকেটের সুবিধা নেওয়ার জন্য শাই হোপের এক সাহসী ও ঐতিহাসিক কৌশল।

২. রিশাদ হোসেনের বিধ্বংসী ক্যামিও: যখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ২০০ রানের নিচে আটকে যাবে, তখনই লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেন মাত্র ১৪ বলে ৩৯ রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন, যার মধ্যে ৪টি ছক্কা ছিল। তার এই ইনিংসটিই বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি এনে দেয়।

৩. ক্যাপ্টেন শাই হোপের অপরাজিত অর্ধশতক: এক প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যেও অধিনায়ক শাই হোপের ৬৭ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংসটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসকে ধরে রাখে এবং ম্যাচটিকে টাই পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

৪. আলোচিত শেষ বল: শেষ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যখন ৩ রান প্রয়োজন, তখন নুরুল হাসান সোহানের সহজ ক্যাচ মিসের ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ রান নিয়ে নেয় এবং ম্যাচটি টাই হয়। এই ক্যাচ মিসের মুহূর্তটি ছিল চরম নাটকীয়তার।

৫. সুপার ওভারের উত্তেজনা: ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম টাই হওয়া ম্যাচ এবং ফল নির্ধারণের জন্য সুপার ওভারের রোমাঞ্চ – যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ পর্যন্ত ১ রানের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় – পুরো ম্যাচটিকে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতায় পরিণত করে।


প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেন তাদের পুরো ৫০ ওভার স্পিনারদের দিয়ে বোলিং করাল?

মিরপুরের উইকেট ছিল অত্যন্ত শুষ্ক, মন্থর এবং স্পিন-সহায়ক। এই উইকেটের সুবিধা নিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক শাই হোপ এক সাহসী কৌশল হিসেবে দলের ৫ জন বিশেষজ্ঞ স্পিনারকে দিয়ে পুরো ৫০ ওভার বোলিং করান, যা ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ঘটল এবং একটি বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করল।

বাংলাদেশ এই ম্যাচটি টাই করার আগে কোনো ফরম্যাটে এর আগে টাই হয়েছিল কি?

না। এই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ইতিহাসে প্রথম টাই হওয়া ম্যাচ (সকল ফরম্যাট মিলিয়ে)। ম্যাচটি টাই হওয়ার পর সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী হয়।

রিশাদ হোসেনের ব্যাটিং পারফরম্যান্স কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

বাংলাদেশের ব্যাটিং যখন ধীরগতিতে চলছিল এবং বড় স্কোরের সম্ভাবনা কম ছিল, তখন রিশাদ হোসেন মাত্র ১৪ বলে ৩৯ রান করে খেলার গতিপথ বদলে দেন। তার এই বিস্ফোরক ইনিংসের ফলেই বাংলাদেশ লড়াকু ২১৪ রান তুলতে সক্ষম হয়।

এই ম্যাচের পর সিরিজে কী অবস্থা তৈরি হলো?

এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে ছিল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার ওভারে জয় লাভ করায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতা ফিরে আসে। পরবর্তী ম্যাচটি সিরিজ নির্ধারণী ফাইনাল হিসেবে গণ্য হবে।

সুপার ওভারে বাংলাদেশের কোন সিদ্ধান্তটি সমালোচিত হয়েছে?

সুপার ওভারে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তাদের বিস্ফোরক ফর্মে থাকা রিশাদ হোসেনকে না পাঠিয়ে সৌম্য সরকার ও তাওহিদ হৃদয়কে পাঠায়, যা অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং ভক্তদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে।

Advertisements
Avatar photo

arif

আরিফ — ক্রিকেট নিউজ ও বিশ্লেষণমূলক লেখক আমি আরিফ, ক্রিকেট বিশ্লেষণ ও আপডেটের প্রতি গভীর আগ্রহী একজন লেখক। নাজিবুল ডট কমে আমি প্রতিদিনের ম্যাচ আপডেট, খেলোয়াড় বিশ্লেষণ, ক্রিকেটের গল্প ও তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করি। আমার উদ্দেশ্য পাঠকদের নির্ভরযোগ্য ও আকর্ষণীয় ক্রিকেট বিশ্লেষণ পৌঁছে দেওয়া।

আমার সব আর্টিকেল

Your comment will appear immediately after submission.

মন্তব্য করুন