এশিয়া কাপে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে এক হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় পেল শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিসের অনবদ্য ব্যাটিং এবং ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সের সুবাদে এই রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা।
আফগানিস্তানের ব্যাটিং ইনিংস: নবী ও রশিদের লড়াকু ইনিংস
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে আফগানিস্তান শুরুতেই ঝড় তোলে। ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ মাত্র ৮ বলে ১৪ রান করে দ্রুত ফিরে গেলেও, আরেক ওপেনার সেদিউল্লাহ আতাল ১৮ এবং ইব্রাহিম জাদরান ২৪ দলের হাল ধরেন। তবে, মাঝের সারির ব্যাটসম্যানরা তেমন বড় স্কোর করতে পারেননি। শেষদিকে, অধিনায়ক রশিদ খান ২৩ বলে ২৪ রান এবং মোহাম্মদ নবী মাত্র ২২ বলে ৬০ রান করেন একটি লড়াকু ইনিংস খেলেন, যা দলকে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
আফগানিস্তান ব্যাটিং স্কোরকার্ড
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
রহমানুল্লাহ গুরবাজ (WK) | ১৪ | ৮ | ২ | ০ | ১৭৫.০০ | c কুশল পেরেরা b নুয়ান থুশারা |
সেদিউল্লাহ আতাল | ১৮ | ১৪ | ২ | ১ | ১২৮.৫৭ | b নুয়ান থুশারা |
করিম জানাত | ১ | ৩ | ০ | ০ | ৩৩.৩৩ | b নুয়ান থুশারা |
ইব্রাহিম জাদরান | ২৪ | ২৭ | ০ | ১ | ৮৮.৮৯ | c চামিরা b দুনিত ওয়েল্লাগে |
দারউইশ রাসুলি | ৯ | ১৬ | ০ | ০ | ৫৬.২৫ | c কুশল পেরেরা b চামিরা |
আজমতুল্লাহ | ৬ | ৪ | ১ | ০ | ১৫০.০০ | b শানাকা |
মোহাম্মদ নবী | ৬০ | ২২ | ২ | ৬ | ২৭২.৭৩ | রান আউট (কুশল পেরেরা/কুশল মেন্ডিস) |
রশিদ খান (C) | ২৪ | ২৩ | ২ | ১ | ১০৪.৩৫ | b নুয়ান থুশারা |
নূর আহমদ | ৬* | ৪ | ০ | ০ | ১৫০.০০ | অপরাজিত |
- অতিরিক্ত রান:৭ (লেগ বাই ৫, ওয়াইড ১, নো বল ১)
মোট🙁১৬৯ রান ৮ উইকেট, ২০ ওভার)
শ্রীলঙ্কার বোলিং: নুয়ান থুশারার ম্যাজিক
শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে নুয়ান থুশারা সবচেয়ে সফল ছিলেন। তিনি ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ৪টি উইকেট শিকার করেন, যা আফগানিস্তানের রানের গতি কমিয়ে দেয়। এছাড়া, দুষ্মন্ত চামিরা, শানাকা এবং দুনিত ওয়েল্লাগে ১টি করে উইকেট পান। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পেলেও দারুণ ইকোনমি বজায় রাখেন।
শ্রীলঙ্কা বোলিং স্কোরকার্ড
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
নুয়ান থুশারা | ৪ | ০ | ১৮ | ৪ | ৪.৫০ |
দুষ্মন্ত চামিরা | ৪ | ০ | ৫০ | ১ | ১২.৫০ |
দুনিত ওয়েল্লাগে | ৪ | ০ | ৪৯ | ১ | ১২.২৫ |
শানাকা | ৪ | ০ | ২৯ | ১ | ৭.২৫ |
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা | ৪ | ০ | ১৮ | ০ | ৪.৫০ |
শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং: কুশল মেন্ডিসের বীরত্ব
১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা শুরুতেই হোঁচট খায়। কিন্তু দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিস একাই লড়তে থাকেন। তিনি ৫১ বলে ৭৪ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৫টি চার এবং ১০টি ছক্কা। তার ইনিংসটিই শ্রীলঙ্কার জয়ের মূল ভিত্তি গড়ে তোলে। এছাড়াও, কুশল পেরেরা ২৮ এবং কামিন্দু মেন্ডিস ১৩ বলে ২৬* রান করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং স্কোরকার্ড
ব্যাটার | রান | বল | ৪স | ৬স | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
পাথুম নিসাঙ্কা | ৬ | ৫ | ১ | ০ | ১২০.০০ | c মুজিব b আজমতুল্লাহ |
কুশল মেন্ডিস (WK) | ৭৪ | ৫১ | ৫ | ১০ | ১৪৫.১০ | অপরাজিত |
কামিল মিশারা | ৪ | ১০ | ০ | ০ | ৪০.০০ | c ইব্রাহিম জাদরান b নবী |
কুশল পেরেরা | ২৮ | ২০ | ৩ | ০ | ১৪০.০০ | c গুরবাজ b মুজিব |
চরিত আসালাঙ্কা (C) | ১৭ | ১২ | ২ | ০ | ১৪১.৬৭ | c রশিদ খান b নূর আহমদ |
কামিন্দু মেন্ডিস | ২৬* | ১৩ | ০ | ২ | ২০০.০০ | অপরাজিত |
- অতিরিক্ত রান: ১৬ (ওয়াইড ১৫, লেগ বাই ১)
- মোট:(১৭১ রান ৪ উইকেট, ১৮.৪ ওভার)
আফগানিস্তানের বোলিং: শ্রীলঙ্কাকে চাপে রাখতে ব্যর্থ
শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের সামনে আফগানিস্তানের বোলাররা তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। মুজিব উর রহমান এবং নূর আহমদ ছাড়া কেউই রান আটকাতে পারেননি।
আফগানিস্তান বোলিং স্কোরকার্ড
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
ফজলহক ফারুকী | ৩ | ০ | ৩৮ | ০ | ১২.৬৭ |
মুজিব উর রহমান | ৩.৪ | ০ | ৪২ | ১ | ১১.৪৫ |
আজমতুল্লাহ ওমরজাই | ২ | ০ | ১০ | ১ | ৫.০০ |
মোহাম্মদ নবী | ৩ | ০ | ২০ | ১ | ৬.৬৭ |
রশিদ খান (C) | ৪ | ০ | ২৩ | ০ | ৫.৭৫ |
নূর আহমদ | ৩ | ০ | ৩৭ | ১ | ১২.৩৩ |
ম্যাচের ফলাফল ও তাৎপর্য
আফগানিস্তানের জন্য এই ম্যাচের ফলাফল ছিল এক বড় ধাক্কা। এই ম্যাচ হেরে আফগানিস্তান ২০২৫ সালের এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিলো। গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচের মধ্যে তাদের জয় ছিল মাত্র একটি এবং হার ছিল দুটি। এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে তারা টুর্নামেন্টের টপ ৪-এ (Top 4) জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গ্রুপে কারা পৌঁছালো টপ ৪-এ(Top 4)?
গ্রুপ A: ভারত ও পাকিস্তান দাপটের সঙ্গে গ্রুপে নিজেদের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করে টপ ৪(Top 4) পৌঁছেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান টপ ৪(Top 4) যেতে পারেনি।
গ্রুপ B: এই গ্রুপ থেকে শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে টপ ৪-এ(Top 4) জায়গা করে নিয়েছে। আফগানিস্তান ও হংকং টপ ৪(Top 4) থেকে বাদ পড়েছে।
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
- ১. কুশল মেন্ডিসের ম্যাচ-জয়ী ইনিংস: কুশল মেন্ডিস ৫১ বলে ৭৪ রানের ইনিংসটি শ্রীলঙ্কার জয়ের মূল কারণ। এই ইনিংসের জন্যই তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
- ২. নুয়ান থুশারার ৪ উইকেট শিকার: তার ৪টি উইকেট আফগানিস্তানের ব্যাটিংকে অনেকটাই দুর্বল করে দেয় এবং রানকে ১৬৯-এ আটকে রাখতে সাহায্য করে।
- ৩. মোহাম্মদ নবী ও নূর আহমদ: শেষদিকে মোহাম্মদ নবী এবং নূর আহমদ জুটি আফগানিস্তানকে একটি লড়াকু স্কোর এনে দেয়, যা ম্যাচটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলে।
- ৪. কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যামিও: মাত্র ১৩ বলে ২৬* রানের ইনিংস খেলে কামিন্দু মেন্ডিস শ্রীলঙ্কাকে শেষদিকে দ্রুত জয়ের পথে নিয়ে আসেন।
- ৫. ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার নিয়ন্ত্রিত বোলিং: উইকেট না পেলেও ৪.৫০ ইকোনমিতে বোলিং করে তিনি আফগান ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বজায় রাখেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
ম্যাচে কে জিতেছে এবং কত রানে?
এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে।
এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান কে করেছেন?
শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিস ৫১ বলে ৭৪ রান করে এই ম্যাচে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন।
এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি উইকেট কে পেয়েছেন?
শ্রীলঙ্কার নুয়ান থুশারা ৪টি উইকেট নিয়েছেন, যা এই ম্যাচে সর্বোচ্চ।
এই ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ অ্যাওয়ার্ড কে পেয়েছিলেন?
কুশল মেন্ডিস তার অসাধারণ ব্যাটিং পারফরম্যান্সের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।
ম্যাচটি কোন স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছিল?
এই ম্যাচটি দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
Your comment will appear immediately after submission.