আজ ৫ আগস্ট—একটি দিন যা শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি তারিখ নয়, বরং একটি জাতির আত্মদানের সাক্ষ্য, সাহসের প্রতিচ্ছবি এবং পরিবর্তনের চূড়ান্ত ঘোষণা।
২০২৪ সালের এই দিনেই ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত গণজোয়ার এক ঐতিহাসিক রায় দিয়ে দেয়:
ক্ষমতার অপব্যবহারে ক্লান্ত একটি জাতি আর একনায়কতন্ত্রকে সহ্য করবে না।
এদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন এবং দেশ ছাড়তে হয় তাকে।
কিন্তু এই জয়ের পেছনের গল্প কি এতটা সহজ ছিল?
সহজ ছিল না — ছিল রক্ত, ছিল চোখের জল
এই বিপ্লবের পথ মসৃণ ছিল না।
বিপরীতে, তা ছিল সংগ্রামের, ত্যাগের, এবং অবিচল মানসিকতার এক জ্বলন্ত দলিল।
হাজার হাজার ছাত্র ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন কেবল নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য।
বিপক্ষের হাতে নিরীহদের ওপর চলে আসে ভয়াবহ দমন-পীড়ন।
তবুও তারা দমে যাননি।
কারণ তারা জানতেন—এটি শুধু রাজনীতি নয়, এটি জাতির ভবিষ্যতের লড়াই।
আন্দোলনের সূচনা: একটি দাবির মধ্য দিয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে
২০২৪ সালের ১ জুলাই, দেশের শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেন।
মূলত কোটা সংস্কার ছিল এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।
- ২-৬ জুলাই: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।
- এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই পরে রূপ নেয় এক সর্বজনীন প্রতিরোধে।
এরপর সেই আন্দোলন আর থেমে থাকেনি—
ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে গ্রাম, ক্যাম্পাস থেকে অফিস, ক্লাসরুম থেকে রাজপথ।
সংঘর্ষ ও হতাহতের নির্মম অধ্যায়
যে কোনো শক্তিশালী আন্দোলনের মতোই, এই গণজাগরণও সহিংসতা এড়াতে পারেনি।
বিভিন্ন সময় পুলিশি হামলায় বহু শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত হন, কেউ কেউ শহীদও হন।
এই রক্তাক্ত পথ পেরিয়েই আসে পরিবর্তনের সূর্যোদয়।
৩ আগস্ট: শহীদ মিনারে জনতার ঢল — এক দফা, এক দাবি
৩ আগস্ট, ঢাকার জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ রূপ নেয় লাখো কণ্ঠের এক মঞ্চে।
একটাই স্লোগান ছড়িয়ে পড়ে আকাশ-বাতাসে:
“শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই!”
এই স্পষ্ট ও দৃঢ় দাবি ছিল দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, হতাশা ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত প্রতিবাদ।
৫ আগস্ট: গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় — শেখ হাসিনার পতন
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—
৫ আগস্ট, লাখো মানুষের প্রতিবাদ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
জনগণের স্রোতের কাছে ক্ষমতা আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
শেখ হাসিনাকে বাধ্য করা হয় পদত্যাগে এবং দেশত্যাগে।
এই দিন শুধু ইতিহাস নয়, একটি বার্তা
৫ আগস্ট এখন কেবল একটি তারিখ নয়—
এটি একটি প্রজন্মের আত্মত্যাগ, সাহস, এবং বিজয়ের প্রতীক।
এই দিনটি মনে করিয়ে দেয়:
- এক সৎ ও ঐক্যবদ্ধ জাতি চাইলেই যেকোনো পরিবর্তন আনতে পারে।
- অধিকার কখনো চেয়ে পাওয়া যায় না, ছিনিয়ে নিতে হয়।
- শাসক যদি জনতার কণ্ঠ রোধ করে, তবে জনতাই ইতিহাস লিখে।
Your comment will appear immediately after submission.