ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়াম, নবি মুম্বই, ২ নভেম্বর, ২০২৫ – দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশের মাটিতে মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া এবং লরা উলভার্টের নেতৃত্বাধীন প্রোটিয়া বাহিনীর মধ্যে এই মহারণটি ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এই আর্টিকেলে টস থেকে শুরু করে ভারতীয় দলের ব্যাটিংয়ের ঝলক, দক্ষিণ আফ্রিকার পাল্টা লড়াই এবং ভারতীয় বোলারদের শেষ মুহূর্তের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মাধ্যমে ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করার সমস্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা হবে। ম্যাচের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স, গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ ও রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
প্রথম ইনিংস: ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং ও শেফালির ঝলক
বৃষ্টির কারণে টস প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে হয়। টসে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক লরা উলভার্ট প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ভারতকে ব্যাটিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
ভারতের দুই ওপেনার শেফালি ভার্মা ৮৭ এবং স্মৃতি মন্ধানা ৪৫ দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। তারা দুজনে মিলে ১০৪ রানের একটি বিধ্বংসী ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়েন। মাত্র ৭১ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শেফালি। স্মৃতি মন্ধানা আউট হওয়ার পর সেমিফাইনালের তারকা জেমিমা রড্রিগেজ ২৪ রান করে দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর ২০ এবং দীপ্তি শর্মা ৫৮ মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। দীপ্তি শর্মা ৫৩ বলে তার অর্ধশতরান পূরণ করেন এবং রিচা ঘোষ ৩৪ শেষদিকে দ্রুত রান তুলে ভারতকে প্রায় ৩০০ রানের কাছাকাছি পৌঁছে দেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে আয়াবোঙ্গা খাকা ৯ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া, ননকুলুলেকো এমলাবা ১০ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ১টি উইকেট এবং ক্লো ট্রায়ন ৭ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন। নাদিন ডি ক্লার্ক ৯ ওভারে ৫২ রান দিয়ে ১টি উইকেট তুলে নেন, যেখানে আমনজ্যোত কৌরকে আউট করার জন্য এক হাতে তাঁর নেওয়া ক্যাচটি ছিল ইনিংসের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং মুহূর্ত।
- ভারত স্কোরকার্ড: ২৯৮ রান/৭ উইকেট/৫০ ওভার
দ্বিতীয় ইনিংস: উলভার্টের শতক এবং দীপ্তি শর্মার ঘূর্ণি জাদু
বিশ্বকাপ জেতার জন্য ২৯৯ রানের কঠিন লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেনিং জুটিতে লরা উলভার্ট এবং তাজমিন ব্রিটস মিলে ৫১ রানের শুরু এনে দেন। তবে আমনজ্যোত কৌর-এর একটি দুর্দান্ত সরাসরি থ্রো (Direct Hit) তে তাজমিন ব্রিটস ২৩ রান আউট হন, যা ছিল ভারতের প্রথম ব্রেক থ্রু এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিল্ডিং মুহূর্ত।
একপ্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন অধিনায়ক লরা উলভার্ট। তিনি মাত্র ৯৮ বলে ১০১ রানের একটি অসাধারণ শতরান করেন, যা প্রোটিয়াদের জয়ের আশা জিইয়ে রাখে। তাঁকে ভালো সমর্থন দেন অ্যানেরি ডার্কসেন ৩৫। একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ২০৯ রান।
এরপরই ভারতীয় স্পিনার দীপ্তি শর্মা তার জাদু দেখান। দীপ্তি তার এক ওভারেই সেট হওয়া লরা উলভার্ট এবং ক্লো ট্রায়নকে আউট করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। লরা উলভার্টের শতরান শেষ হয় বাউন্ডারি লাইনে আমনজ্যোত কৌর-এর নেওয়া একটি অসাধারণ রানিং ক্যাচে। দীপ্তি ৯.৩ ওভার বল করে মাত্র ৩৯ রান দিয়ে মোট ৫টি উইকেট তুলে নেন। শেফালি ভার্মা ৪ ওভার বল করে ৩৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এছাড়া, শ্রী চারণী ৯ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন। রেণুকা সিং তার ৮ ওভারের স্পেলে মাত্র ২৮ রান দিয়ে শূন্যউইকেট থাকলেও চাপ ধরে রাখেন।
ম্যাচের শেষ উইকেটটি হরমনপ্রীত কৌর একটি সেনসেশনাল ক্যাচ ধরে নিজের নামে করেন, যা ছিল ভারতের বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিতকারী মুহূর্ত। ভারতের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৬ ওভারের মধ্যেই ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। ভারত ঐতিহাসিক ভাবে ৫২ রানে জয়লাভ করে।
- দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোরকার্ড: ২৪৬ রান/১০ উইকেট/৪৫.৩ ওভার
- ভারত ৫২ রানে জয়ী হয়েছে
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. প্রথম বিশ্বকাপ জয়: মহিলা ক্রিকেটে ভারত এই প্রথমবার আইসিসি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করল।
২. দীপ্তি শর্মার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স: ব্যাট হাতে ৫৮ রান এবং বল হাতে ৫ উইকেটের (৫/৩৯) দুরন্ত স্পেল, যা ফাইনাল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে।
৩. শেফালি-স্মৃতির শুরু: শেফালি ভার্মা ৮৭ এবং স্মৃতি মন্ধানা ৪৫-এর ১০৪ রানের উদ্বোধনী জুটিটিই ভারতের বড় স্কোরের ভিত্তি স্থাপন করে।
৪. ম্যাচ জেতানো ক্যাচ ও ফিল্ডিং: তাজমিন ব্রিটসকে আমনজ্যোত কৌরের সরাসরি থ্রোতে রান আউট করা এবং লরা উলভার্টকে অসাধারণ রানিং ক্যাচে আউট করা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
৫. লরা উলভার্টের একক লড়াই: দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক লরা উলভার্টের ১০১ রানের লড়াকু শতরান।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ কে?
শেফালি ভার্মা (ব্যাটিংয়ে ৮৭ রান এবং বোলিংয়ে ২/৩৬)।
ভারত কত বছর পর বিশ্বকাপ জয়ী হলো?
৪৭ বছরের অপেক্ষার পর ভারত তাদের প্রথম মহিলা ওডিআই বিশ্বকাপ শিরোপা জিতল।
ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার?
শেফালি ভার্মা (৮৭ রান)।
দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার?
আয়াবোঙ্গা খাকা (৯ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট)।
ফাইনাল ম্যাচের ব্যবধান কত ছিল?
ভারত ৫২ রানে জয়ী হয়েছে।
ম্যাচের ফলাফল কী?
ভারত তাদের প্রথম মহিলা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করল।
Your comment will appear immediately after submission.