২০২৩ সালের আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে হওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া ভারতকে ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে টেস্ট ক্রিকেটে তাদের প্রথম বিশ্ব শিরোপা জয় করে। এটি ছিল টানা দ্বিতীয় WTC ফাইনালে ভারতের হার।
টস ও অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস: ট্রাভিস হেডের মাস্টারক্লাস
ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম দিনের শুরুটা ভারত ভালো করলেও, এরপর অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেড (১৬৩) এবং স্টিভ স্মিথ (১২১)-এর জোড়া সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া বড় স্কোর গড়ে তোলে। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৪৬৯ রান সংগ্রহ করে।
অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
ডেভিড ওয়ার্নার | ৪৩ | ৬০ | ৮ | ০ | ৭১.৬৭ | c ভারত b শার্দুল |
উসমান খোয়াজা | ১৩ | ১০ | ২ | ০ | ১৩০.০০ | c ভারত b সিরাজ |
মার্নাস লাবুশেন | ২৬ | ৬২ | ৪ | ০ | ৪১.৯৪ | b সিরাজ |
স্টিভ স্মিথ | ১২১ | ২৬৮ | ১৯ | ০ | ৪৫.১৪ | b ঠাকুর |
ট্রাভিস হেড | ১৬৩ | ১৭৪ | ২৫ | ১ | ৯৩.৬৮ | c ভারত b সিরাজ |
ক্যামেরন গ্রিন | ৬ | ৭ | ১ | ০ | ৮৫.৭১ | b শামি |
অ্যালেক্স ক্যারি (WK) | ৪৮ | ৬২ | ৭ | ০ | ৭৭.৪১ | b জাদেজা |
প্যাট কামিন্স (C) | ৯ | ৩৪ | ১ | ০ | ২৬.৪৭ | b সিরাজ |
মিচেল স্টার্ক | ৫ | ২০ | ০ | ০ | ২৫.০০ | c কোহলি b শামি |
নাথান লায়ন | ৯ | ২৫ | ১ | ০ | ৩৬.০০ | lbw b সিরাজ |
স্কট বোল্যান্ড | ১ | ৮ | ০ | ০ | ১২.৫০ | not out |
- অতিরিক্ত রান: ২৫ (লেগ বাই ৮, ওয়াইড ১, নো বল ১৬)
- মোট: ৪৬৯ রান (১০ উইকেট, ১২১.৩ ওভার)
ভারত বোলিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
মহম্মদ শামি | ২৯ | ৪ | ১২২ | ২ | ৪.২১ |
মহম্মদ সিরাজ | ২৮.৩ | ৪ | ১০৮ | ৪ | ৩.৭৯ |
উমেশ যাদব | ২৩ | ০ | ৭৭ | ০ | ৩.৩৩ |
শার্দুল ঠাকুর | ২৩ | ৪ | ৮৩ | ২ | ৩.৬১ |
রবীন্দ্র জাদেজা | ১৫ | ৪ | ৫৬ | ১ | ৩.৭৩ |
বিরাট কোহলি | ২ | ০ | ১৫ | ০ | ৭.৫০ |
ভারতের প্রথম ইনিংস: রাহানে ও শার্দুলের লড়াই
বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং চেতেশ্বর পূজারার দ্রুত আউটের পর ভারত চাপে পড়ে যায়। তবে, অজিঙ্কা রাহানে (৮৯) এবং শার্দুল ঠাকুরের (৫১) দৃঢ়তা ভারতকে ফলো-অন এড়াতে সাহায্য করে। ভারত প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রান সংগ্রহ করে।
ভারত ব্যাটিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
রোহিত শর্মা (C) | ১৫ | ২৬ | ২ | ১ | ৫৭.৬৯ | lbw b কামিন্স |
শুভমান গিল | ১৩ | ১৫ | ২ | ০ | ৮৬.৬৭ | b বোল্যান্ড |
চেতেশ্বর পূজারা | ১৪ | ২৫ | ২ | ০ | ৫৬.০০ | b গ্রিন |
বিরাট কোহলি | ১৪ | ৩১ | ২ | ০ | ৪৫.১৬ | c স্মিথ b স্টার্ক |
রবীন্দ্র জাদেজা | ৪৮ | ৫১ | ৭ | ০ | ৯৪.১১ | c স্মিথ b বোল্যান্ড |
অজিঙ্কা রাহানে | ৮৯ | ১২৯ | ১১ | ১ | ৬৮.৯৯ | c গ্রিন b স্টার্ক |
শ্রীকর ভারত (WK) | ৫ | ১৫ | ০ | ০ | ৩৩.৩৩ | b কামিন্স |
শার্দুল ঠাকুর | ৫১ | ১০৯ | ৬ | ০ | ৪৬.৭৯ | c গ্রিন b গ্রিন |
উমেশ যাদব | ০ | ৩ | ০ | ০ | ০.০০ | c স্মিথ b কামিন্স |
মহম্মদ শামি | ১৩ | ২৪ | ২ | ০ | ৫৪.১৭ | not out |
মহম্মদ সিরাজ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০.০০ | b লায়ন |
- অতিরিক্ত রান: ৩০ (বাই ১০, লেগ বাই ১০, ওয়াইড ১০)
- মোট: ২৯৬ রান (১০ উইকেট, ৬৯.৪ ওভার)
অস্ট্রেলিয়া বোলিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
প্যাট কামিন্স | ২০ | ২ | ৮৩ | ৩ | ৪.১৫ |
স্কট বোল্যান্ড | ২০ | ৫ | ৫৯ | ২ | ২.৯৫ |
মিচেল স্টার্ক | ১৪ | ০ | ৭১ | ২ | ৫.০৭ |
ক্যামেরন গ্রিন | ১০ | ২ | ৪৪ | ২ | ৪.৪০ |
নাথান লায়ন | ৫.৪ | ১ | ১৯ | ১ | ৩.৩৮ |
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস: ভারতের জন্য কঠিন লক্ষ্য
প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানের লিড নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে থাকে। অ্যালেক্স ক্যারি (অপরাজিত ৬৬) এবং মার্নাস লাবুশেন (৪১ অপরাজিত)-এর ব্যাটে ভর করে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে ২৭০ রানে ডিক্লেয়ার করে এবং ভারতকে ৪৪৪ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয়।
অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং স্কোরকার্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
ডেভিড ওয়ার্নার | ১ | ২ | ০ | ০ | ৫০.০০ | c গিল b সিরাজ |
উসমান খোয়াজা | ১৩ | ৩১ | ০ | ০ | ৪১.৯৩ | c ভারত b উমেশ |
মার্নাস লাবুশেন | ৪১* | ১০৬ | ৪ | ০ | ৩৮.৬৮ | অপরাজিত |
স্টিভ স্মিথ | ৩৪ | ৪৭ | ৩ | ০ | ৭২.৩৪ | c শার্দুল b জাদেজা |
ট্রাভিস হেড | ১৮ | ২৭ | ৩ | ০ | ৬৬.৬৭ | c গিল b জাদেজা |
ক্যামেরন গ্রিন | ২৫ | ২৭ | ২ | ১ | ৯২.৫৯ | c রোহিত b জাদেজা |
অ্যালেক্স ক্যারি (WK) | ৬৬* | ১০৫ | ৮ | ০ | ৬২.৮৬ | অপরাজিত |
- অতিরিক্ত রান: ১৬ (বাই ১, লেগ বাই ১৩, নো বল ২)
- মোট: ২৭০ রান (৮ উইকেট ডিক্লেয়ার, ৮৪.৩ ওভার)
ভারত বোলিং স্কোরকার্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
মহম্মদ শামি | ১৫ | ৩ | ৪১ | ১ | ২.৭৩ |
মহম্মদ সিরাজ | ১৫.৩ | ১ | ৫২ | ১ | ৩.৩৪ |
উমেশ যাদব | ১২ | ১ | ৫২ | ২ | ৪.৩৩ |
শার্দুল ঠাকুর | ৪ | ০ | ১৫ | ০ | ৩.৭৫ |
রবীন্দ্র জাদেজা | ২৫ | ৬ | ৫৮ | ৩ | ২.৩২ |
বিরাট কোহলি | ২ | ০ | ৭ | ০ | ৩.৫০ |
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ও অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়: বোল্যান্ডের জাদু
৪৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত পঞ্চম দিনে স্কট বোল্যান্ডের (৩/৪৬) বিধ্বংসী বোলিংয়ের মুখে পড়ে। শুভমান গিল এবং বিরাট কোহলির (৪৯) দ্রুত পতনের পর ভারতের পরাজয় নিশ্চিত হয়। ভারত শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৩৪ রানে অলআউট হয়ে যায় এবং অস্ট্রেলিয়া ২০৯ রানে জয়ী হয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তোলে।
ভারত ব্যাটিং স্কোরকার্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
রোহিত শর্মা (C) | ৪৩ | ৬০ | ৭ | ০ | ৭১.৬৭ | lbw b লায়ন |
শুভমান গিল | ১৮ | ১৯ | ৩ | ০ | ৯৪.৭৪ | c গ্রিন b বোল্যান্ড |
চেতেশ্বর পূজারা | ২৭ | ৪৭ | ৫ | ০ | ৫৭.৪৪ | c ক্যারি b বোল্যান্ড |
বিরাট কোহলি | ৪৯ | ৭৮ | ৭ | ০ | ৬২.৮২ | c স্মিথ b বোল্যান্ড |
অজিঙ্কা রাহানে | ৪৬ | ১০৮ | ৭ | ০ | ৪২.৫৯ | c ক্যারি b স্টার্ক |
রবীন্দ্র জাদেজা | ০ | ১ | ০ | ০ | ০.০০ | c ক্যারি b স্টার্ক |
শ্রীকর ভারত (WK) | ২৩ | ৪১ | ৪ | ০ | ৫৬.১০ | b লায়ন |
শার্দুল ঠাকুর | ০ | ৫ | ০ | ০ | ০.০০ | c ক্যারি b গ্রিন |
উমেশ যাদব | ১ | ১৪ | ০ | ০ | ৭.১৪ | c ক্যারি b স্টার্ক |
মহম্মদ শামি | ১৩ | ২০ | ১ | ০ | ৬৫.০০ | not out |
মহম্মদ সিরাজ | ১ | ১০ | ০ | ০ | ১০.০০ | b লায়ন |
- অতিরিক্ত রান: ১৩ (লেগ বাই ৬, ওয়াইড ৬, নো বল ১)
- মোট: ২৩৪ রান (১০ উইকেট, ৭০.২ ওভার)
অস্ট্রেলিয়া বোলিং স্কোরকার্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
প্যাট কামিন্স (C) | ১৩ | ৪ | ৪২ | ১ | ৩.২৩ |
মিচেল স্টার্ক | ১০ | ২ | ৭৭ | ২ | ৭.৭০ |
স্কট বোল্যান্ড | ১৬ | ৩ | ৪৬ | ৩ | ২.৮৭ |
ক্যামেরন গ্রিন | ৬ | ৩ | ১৩ | ১ | ২.১৬ |
নাথান লায়ন | ১৮.৩ | ২ | ৪১ | ৪ | ২.২১ |
ম্যাচের ফলাফল এবং টুর্নামেন্ট পুরস্কার
ফলাফল | ম্যান অফ দ্য ম্যাচ | টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান | টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট |
অস্ট্রেলিয়া ২০৯ রানে জয়ী | ট্রাভিস হেড | মার্নাস লাবুশেন (১৮০৯ রান) | নাথান লায়ন (৮৩ উইকেট) |
২০২৩ WTC ফাইনালের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. ট্রাভিস হেডের আগ্রাসী সেঞ্চুরি: প্রথম দিনে যখন ভারতের বোলাররা চাপ তৈরি করছিল, ঠিক তখনই ট্রাভিস হেড (১৬৩) আগ্রাসী ব্যাটিং করে স্মিথের সাথে জুটি বাঁধেন এবং ম্যাচের মোড় সম্পূর্ণরূপে ঘুরিয়ে দেন। এটিই ছিল ম্যাচের প্রধান পার্থক্য।
২. অজিঙ্কা রাহানের কামব্যাক: দীর্ঘ বিরতির পর দলে ফিরে এসে চাপের মুহূর্তে রাহানে (৮৯) দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। বাঁ-হাতে চোট নিয়েও তিনি ভারতের ফলো-অন এড়াতে সাহায্য করেছিলেন।
৩. স্কট বোল্যান্ডের স্পেল: রিজার্ভ ডে-তে (পঞ্চম দিন) সকালে স্কট বোল্যান্ডের স্পেলটি ছিল বিধ্বংসী। তিনি শুভমান গিল, চেতেশ্বর পূজারা এবং বিরাট কোহলিকে দ্রুত আউট করে ভারতের জয়ের শেষ আশাটুকুও শেষ করে দেন।
৪. ক্যামেরন গ্রিনের অবিশ্বাস্য ক্যাচ: শুভমান গিলের আউটের সময় দ্বিতীয় ইনিংসে স্লিপে ক্যামেরন গ্রিনের নেওয়া অবিশ্বাস্য এক হাতের ক্যাচটি ছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।
৫. স্মিথ ও লাবুশেনের দৃঢ়তা: স্মিথ প্রথম ইনিংসে ১২১ এবং লাবুশেন দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৪১ রান করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে মজবুত ভিত্তি দেন, যা জয়ের পথ প্রশস্ত করেছিল।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
২০২৩ সালের WTC ফাইনাল কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
এই ফাইনালটি ইংল্যান্ডের লন্ডনের কেনিংটন ওভাল (The Oval) স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এই ফাইনাল ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ কে হয়েছিলেন?
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেড তাঁর প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রানের ইনিংসের জন্য ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০২৩ WTC-এর চ্যাম্পিয়ন দল কোনটি?
ভারতকে ২০৯ রানে পরাজিত করে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করে।
WTC ফাইনাল ২০২৩-এর সময়কাল কত ছিল?
ফাইনালটি ৭ জুন থেকে ১১ জুন ২০২৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
WTC-এর এই চক্রে (২০২১-২০২৩) সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক কে ছিলেন?
অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লায়ন WTC-এর এই চক্রে ৮৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন।
Your comment will appear immediately after submission.