২০২১ সালের আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনাল সাউদাম্পটনের অ্যাগেস বাউল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বৃষ্টিবিঘ্নিত এই ঐতিহাসিক ফাইনালটি শেষ পর্যন্ত রিজার্ভ ডে-তে গড়ায়। কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারতকে ৮ উইকেটে পরাজিত করে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়।
টস ও ভারতের প্রথম ইনিংস: জেমিসনের ৫ উইকেটের জাদু
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। অভিজ্ঞ কিউই পেসার কাইল জেমিসনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ চাপে পড়ে।
ভারত ব্যাটিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
শুভমান গিল | ২৮ | ৬৪ | ৩ | ০ | ৪৩.৭৫ | c ওয়াটলিং b জেমিসন |
রোহিত শর্মা | ৩৪ | ৬৮ | ৬ | ০ | ৫০.০০ | c ওয়াটলিং b জেমিসন |
বিরাট কোহলি (C) | ৪৪ | ১৩২ | ১ | ০ | ৩৩.৩৩ | lbw b জেমিসন |
চেতেশ্বর পূজারা | ৮ | ৫৪ | ০ | ০ | ১৪.৮১ | lbw b বোল্ট |
অজিঙ্কা রাহানে | ৪৯ | ১১৭ | ৫ | ০ | ৪১.৮৮ | c ল্যাথাম b ওয়াগনার |
ঋষভ পন্ত (WK) | ৪ | ২২ | ০ | ০ | ১৮.১৮ | c ল্যাথাম b বোল্ট |
রবীন্দ্র জাদেজা | ১৫ | ৪৯ | ২ | ০ | ৩০.৬১ | c ওয়াটলিং b বোল্ট |
আর অশ্বিন | ২২ | ২৭ | ৩ | ০ | ৮১.৪৮ | c ল্যাথাম b সাউদি |
মহম্মদ শামি | ১৩ | ২৪ | ২ | ০ | ৫৪.১৭ | c ল্যাথাম b জেমিসন |
ইশান্ত শর্মা | ৪ | ৮ | ০ | ০ | ৫০.০০ | not out |
জসপ্রিত বুমরা | ০ | ১ | ০ | ০ | ০.০০ | b জেমিসন |
- অতিরিক্ত রান: ১০ (লেগ বাই ৮, ওয়াইড ২)
- মোট: ২১৭ রান (১০ উইকেট, ৯২.১ ওভার)
নিউজিল্যান্ড বোলিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
কাইল জেমিসন | ২২ | ১২ | ৩১ | ৫ | ১.৪১ |
ট্রেন্ট বোল্ট | ২১.১ | ৪ | ৪৭ | ২ | ২.২২ |
টিম সাউদি | ২২ | ৬ | ৬৪ | ১ | ২.৯০ |
নীল ওয়াগনার | ১৯ | ৭ | ৪৩ | ২ | ২.২৬ |
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম | ৬ | ৩ | ২০ | ০ | ৩.৩৩ |
নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস: উইলিয়ামসন-কনওয়ের দৃঢ়তা
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৪৯ রান সংগ্রহ করে, ফলে তারা ৩২ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড পায়। ভারতের হয়ে মহম্মদ শামি ৪ উইকেট নিয়ে লড়াই করেন।
নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
টম ল্যাথাম | ৩০ | ৮৪ | ৩ | ০ | ৩৫.৭১ | c কোহলি b অশ্বিন |
ডেভন কনওয়ে | ৫৪ | ১৫৩ | ৬ | ০ | ৩৫.২৯ | c শামি b ইশান্ত |
কেন উইলিয়ামসন (C) | ৪৯ | ১৭৭ | ৬ | ০ | ২৭.৬৮ | c কোহলি b জাদেজা |
রস টেলর | ১১ | ৩৭ | ২ | ০ | ২৯.৭২ | c গিল b শামি |
হেনরি নিকোলস | ৭ | ২২ | ১ | ০ | ৩১.৮২ | c রোহিত b শামি |
বিজে ওয়াটলিং (WK) | ১ | ৩ | ০ | ০ | ৩৩.৩৩ | b শামি |
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম | ১৩ | ৫৮ | ২ | ০ | ২২.৪১ | c পন্ত b ইশান্ত |
কাইল জেমিসন | ২১ | ৪৬ | ৪ | ০ | ৪৫.৬৫ | c রোহিত b ইশান্ত |
নীল ওয়াগনার | ০ | ৫ | ০ | ০ | ০.০০ | lbw b শামি |
টিম সাউদি | ৩০ | ৪৬ | ১ | ২ | ৬৫.২১ | not out |
ট্রেন্ট বোল্ট | ০ | ৩ | ০ | ০ | ০.০০ | b জাদেজা |
- অতিরিক্ত রান: ৩৩ (বাই ৯, লেগ বাই ১৪, ওয়াইড ৩, নো বল ৭)
- মোট: ২৪৯ রান (১০ উইকেট, ৯৯.২ ওভার)
ভারত বোলিং স্কোরকার্ড (প্রথম ইনিংস)
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
জসপ্রিত বুমরা | ২৬.২ | ৪ | ৫৭ | ০ | ২.১৬ |
ইশান্ত শর্মা | ২৫ | ৬ | ৪৮ | ৩ | ১.৯২ |
মহম্মদ শামি | ২৬ | ৮ | ৭৬ | ৪ | ২.৯২ |
আর অশ্বিন | ১৫ | ৫ | ২৮ | ২ | ১.৮৬ |
রবীন্দ্র জাদেজা | ৭ | ২ | ২৪ | ১ | ৩.৪২ |
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস: সাউদি-বোল্টের জোড়া আঘাত
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। একমাত্র ঋষভ পন্তের ৪১ রানের ইনিংস ছাড়া আর কেউই বড় স্কোর করতে পারেননি। টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট মিলে ৭টি উইকেট তুলে নিলে ভারত মাত্র ১৭০ রানে গুটিয়ে যায়।
ভারত ব্যাটিং স্কোরকার্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
শুভমান গিল | ৮ | ১৯ | ১ | ০ | ৪২.১০ | c ল্যাথাম b বোল্ট |
রোহিত শর্মা | ৩০ | ৮১ | ৫ | ০ | ৩৭.০৪ | lbw b সাউদি |
বিরাট কোহলি (C) | ১৩ | ২৯ | ০ | ০ | ৪৪.৮৩ | c ওয়াটলিং b জেমিসন |
চেতেশ্বর পূজারা | ১৫ | ৮০ | ২ | ০ | ১৮.৭৫ | b বোল্ট |
অজিঙ্কা রাহানে | ১৫ | ৪০ | ২ | ০ | ৩৭.৫০ | c ওয়াটলিং b বোল্ট |
ঋষভ পন্ত (WK) | ৪১ | ৮৮ | ৪ | ০ | ৪৬.৫৯ | c নিকোলস b বোল্ট |
রবীন্দ্র জাদেজা | ১৬ | ৪৯ | ২ | ০ | ৩২.৬৫ | c জেমিসন b সাউদি |
আর অশ্বিন | ১ | ৯ | ০ | ০ | ১১.১১ | b সাউদি |
মহম্মদ শামি | ১৩ | ২৮ | ২ | ০ | ৪৬.৪২ | c ওয়াটলিং b সাউদি |
ইশান্ত শর্মা | ১ | ৫ | ০ | ০ | ২০.০০ | not out |
জসপ্রিত বুমরা | ০ | ৩ | ০ | ০ | ০.০০ | c উইলিয়ামসন b জেমিসন |
- অতিরিক্ত রান: ৭ (লেগ বাই ৪, ওয়াইড ৩)
- মোট: ১৭০ রান (১০ উইকেট, ৭৩.০ ওভার)
নিউজিল্যান্ড বোলিং স্কোরকার্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
বোলার | ওভার | মেডেন | রান | উইকেট | ইকোনমি |
কাইল জেমিসন | ১৭ | ৮ | ৩০ | ২ | ১.৭৬ |
ট্রেন্ট বোল্ট | ১৮.৩ | ৫ | ৩৯ | ৩ | ২.১১ |
টিম সাউদি | ১৯ | ৪ | ৪৮ | ৪ | ২.৫৩ |
নীল ওয়াগনার | ১২ | ৬ | ২৫ | ০ | ২.০৮ |
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম | ৬ | ৩ | ২৬ | ১ | ৪.৩৩ |
নিউজিল্যান্ডের শিরোপা জয়: উইলিয়ামসন-টেলরের ম্যাচ-জয়ী পার্টনারশিপ
মাত্র ১৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড শুরুতে ২ উইকেট হারালেও, অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন (অপরাজিত ৫২) এবং অভিজ্ঞ রস টেলরের (অপরাজিত ৪৭) ম্যাচ-জয়ী পার্টনারশিপে তারা সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং স্কোরকার্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
ব্যাটার | রান | বল | ৪ | ৬ | স্ট্রাইক রেট | আউটের ধরণ |
টম ল্যাথাম | ৯ | ২৫ | ১ | ০ | ৩৬.০০ | c পন্ত b অশ্বিন |
ডেভন কনওয়ে | ১৯ | ৪৭ | ৩ | ০ | ৪০.৪৩ | lbw b অশ্বিন |
কেন উইলিয়ামসন (C) | ৫২* | ৮৯ | ৮ | ০ | ৫৮.৪৩ | অপরাজিত |
রস টেলর | ৪৭* | ১০০ | ৬ | ০ | ৪৭.০০ | অপরাজিত |
অতিরিক্ত রান: ১৩ (বাই ৫, লেগ বাই ৩, ওয়াইড ৪, নো বল ১) মোট: ১৪০ রান (২ উইকেট, ৪৫.৫ ওভার)
ম্যাচের ফলাফল এবং টুর্নামেন্ট পুরস্কার
ফলাফল | ম্যান অফ দ্য ম্যাচ | টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান | টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট |
নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী | কাইল জেমিসন | মার্নাস লাবুশেন (১৬৭৫ রান) | রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৭২ উইকেট) |
২০২১ WTC ফাইনালের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. কাইল জেমিসনের ফাইনাল-সেরা বোলিং: ম্যাচের সবচেয়ে বড় পার্থক্য তৈরি করেন জেমিসন। প্রথম ইনিংসে ৩১ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে ২১৭ রানে আটকে দেওয়াই ছিল নিউজিল্যান্ডের জয়ের প্রধান ভিত্তি।
২. ষষ্ঠ দিনের নাটकीय মোড়: বৃষ্টির কারণে একটি পুরো দিনের খেলা বাতিল হলেও, রিজার্ভ ডে-তে (ষষ্ঠ দিন) কিউই পেসাররা ভারতকে ১৭০ রানে অলআউট করে ১৪০ রানের লক্ষ্য সেট করে ম্যাচটিকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
৩. উইলিয়ামসনের নেতৃত্ব ও ব্যাটিং: কেন উইলিয়ামসন দুই ইনিংসেই (৪৯ ও অপরাজিত ৫২*) অত্যন্ত শান্ত এবং দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। তাঁর নেতৃত্ব ছিল সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত।
৪. ভারতের ব্যাটিং ধস: দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৪১ রান করা ঋষভ পন্ত ছাড়া কোনো ভারতীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি। এই ব্যাটিং ব্যর্থতাই ভারতের হৃদয়ভঙ্গের কারণ হয়েছিল।
৫. রস টেলরের জয়সূচক বাউন্ডারি: অভিজ্ঞ রস টেলরের ব্যাট থেকে জয়সূচক বাউন্ডারিটি আসে। এটি ছিল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
২০২১ সালের WTC ফাইনাল কবে এবং কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
২০২১ সালের ১৮ থেকে ২৩ জুন (রিজার্ভ ডে সহ) ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের অ্যাগেস বাউল স্টেডিয়ামে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এই ফাইনাল ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ কে হয়েছিলেন?
নিউজিল্যান্ডের পেসার কাইল জেমিসন তাঁর দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট ৫/৩১ এবং ২/৩০ নেওয়ার জন্য ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০২১ WTC-এর চ্যাম্পিয়ন দল কোনটি?
ভারতকে ৮ উইকেটে পরাজিত করে নিউজিল্যান্ড বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম শিরোপা জয় করে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত কত রানে অলআউট হয়েছিল?
নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণের মুখে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৭০ রানে অলআউট হয়েছিল।
WTC-এর প্রথম চক্রে (২০১৯-২০২১) সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কে ছিলেন?
WTC-এর প্রথম চক্রে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান মার্নাস লাবুশেন ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
Your comment will appear immediately after submission.