১৯৭৩ সালের মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি ক্রিকেট ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায়। এই ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ২৮শে জুলাই, রবিবার, ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেট স্টেডিয়াম লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। মুখোমুখি হয়েছিল দুটি শক্তিশালী দল – ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের মক্কায় প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনাল আয়োজিত হওয়ায় এই ম্যাচটি ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে।
টসে জিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ডেনিস মুরস প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের ইনিংসের শুরুটা বেশ সতর্ক ছিল। ওপেনার লিন থমাস এবং ক্রিস ওয়াটকিনস দলকে একটি মজবুত সূচনা এনে দেন। তবে দলের মূল ভিত্তি স্থাপন করেন অলরাউন্ডার ডেনিস মুরস (Enid Bakewell), যিনি ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের পরিচয় দেন এবং অপরাজিত ১১৮ রানের একটি মূল্যবান ইনিংস উপহার দেন। মিডল অর্ডারে ক্রিস ওয়াটকিনস ৪৫ রান করে দলের রান গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে ইনিংসের শেষদিকে মুরস আগ্রাসী ব্যাটিং করেন। তাঁর এই বিস্ফোরক ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে নির্ধারিত ৬০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রানের একটি বিশাল স্কোর এনে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে প্যাট্রিসিয়া কর্নওয়েল (১/৫০) এবং টিং টেইলর (১/৩৮) উইকেট লাভ করেন।
- ইংল্যান্ড স্কোরকার্ড: ২৭৯ রান/৩ উইকেট/৬০ ওভারে
জবাবে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া শুরুটা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই করতে পারেনি। ইংলিশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকেন। ওপেনার জুডিথ নি (Judith Neale) এবং টিনা টেইলর (Tina Taylor) দ্রুত রান তুলতে ব্যর্থ হন। অধিনায়ক অ্যান গর্ডন এবং জুডি উইলস (Judy Willson) কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। টিং টেইলর ৪৫ রানের একটি লড়াকু ইনিংস খেলে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তবে ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা চাপে পড়ে যান। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে রোথ ওস্টিন (২/৪৪), জুন স্টিফেনসন (২/২২) এবং ডেনিস মুরস (১/৩৮) উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে চাপ সৃষ্টি করেন।শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া দল নির্ধারিত ৬০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৭ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।
- অস্ট্রেলিয়া স্কোরকার্ড: ১৮৭ রান/৭ উইকেট /৬০ ওভার
এই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ইংল্যান্ড মাত্র ৯২ রানের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের করে নেয়।
ডেনিস মুরস তার অসাধারণ এবং ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের জন্য “ম্যান অফ দ্য ম্যাচ” নির্বাচিত হন।
এই জয় ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করে এবং পরবর্তীতে তারা আরও অনেক বড় প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করে। লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডের এই ঐতিহাসিক জয় আজও মহিলা ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছে।
Your comment will appear immediately after submission.