১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল ক্রিকেট ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ২৫শে জুন, ১৯৮৩ তারিখে ইংল্যান্ডের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই সময়ের ক্রিকেট বিশ্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যারা এর আগের দুটি বিশ্বকাপ (১৯৭৫ ও ১৯৭৯) জিতে নিয়েছিল। কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল, যাদের সেভাবে কেউই গোনায় ধরেনি, ফাইনালে পৌঁছে এক অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান।
ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে। কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তের ৩৮ রানই ছিল দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। মাত্র ৫৪.৪ ওভারে ১৮৩ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ত্রয়ী – অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শাল এবং জোয়েল গার্নার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন।
ভারত স্কোরকার্ড: ১৮৩ রান/১০ উইকেট/৫৪.৪ ওভার
১৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলের কাছে তেমন কঠিন ছিল না। অনেকেই ধরেই নিয়েছিলেন যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহজেই তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেবে। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা অন্যরকম কিছু করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শুরু হতেই ভারতীয় বোলাররা একের পর এক উইকেট তুলে নিতে শুরু করেন। মদন লাল এবং মহিন্দর অমরনাথের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ভিভ রিচার্ডস যখন ২৭ রান করে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন, তখনই কপিল দেব প্রায় ২০ গজ দৌড়ে এসে এক অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে তাঁকে প্যাভিলিয়নে ফেরান। এই ক্যাচটি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামে। মহিন্দর অমরনাথ ৩টি এবং মদন লালও ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন। বলবিন্দর সান্ধু এবং কপিল দেবও একটি করে উইকেট পান। শেষ পর্যন্ত ৫২ ওভারে ১৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারত ৪৩ রানে এক ঐতিহাসিক জয় লাভ করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরকার: ১৪০ রান/১০ উইকেট/৫২ ওভারে
এই জয় শুধু ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ই ছিল না, এটি বিশ্ব ক্রিকেটের গতিপথও পরিবর্তন করে দিয়েছিল। দুর্বল প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলতে আসা একটি দল, যাদের হারানোর আশা প্রায় কেউই করেনি, তারা শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় – এই রূপকথা আজও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে গেঁথে আছে।
মহিন্দর অমরনাথ তাঁর অসাধারণ বোলিং-এর জন্য ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক সোনালী অধ্যায়, যা পরবর্তী প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে এবং অসাধ্য সাধন করতে আজও অনুপ্রাণিত করে।
Your comment will appear immediately after submission.