শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী | ব্যাটিং কিংবদন্তির বাংলা জীবনী

✅ বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত
5/5 - (1 vote)

শচীন রমেশ তেন্ডুলকর, শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি আবেগ, একটি বিশ্বাস, কোটি কোটি ভারতবাসীর হৃদস্পন্দন। ক্রিকেট বিশ্বে তিনি ‘লিটল মাস্টার’ বা ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ নামেই সমধিক পরিচিত। মুম্বাইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৭৩ সালের ২৪শে এপ্রিল তাঁর জন্ম। বাবা রমেশ তেন্ডুলকর ছিলেন একজন মারাঠি ঔপন্যাসিক ও মা রজনী তেন্ডুলকর বীমা কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। শচীনের নামকরণ করা হয় বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেববর্মণের নামে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অদম্য আগ্রহ ছিল এবং এই আগ্রহই তাঁকে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে এক কিংবদন্তীর আসনে বসিয়েছে।


শচীনের ক্রিকেট জীবনের শুরুটা হয় তাঁর কোচ রমাকান্ত আচরেকরের হাত ধরে। আচরেকরের কঠোর প্রশিক্ষণ এবং শৃঙ্খলাপরায়ণতাই শচীনকে ভবিষ্যতের কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তুলেছিল। কিশোর বয়সেই তিনি নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন এবং ১৯৮৮ সালে হ্যারিস শিল্ড আন্তঃস্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বিনোদ কাম্বলির সাথে ৬৬৪ রানের অবিস্মরণীয় জুটি গড়েন। এই ইনিংসটিই জাতীয় স্তরে তাঁর আগমন বার্তা দেয়।
১৯৮৯ সালের নভেম্বরে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করাচিতে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে ওয়াকার ইউনিসের বাউন্সারে নাক ফেটে যাওয়া সত্ত্বেও শচীনের দৃঢ় মনোবল এবং ব্যাটিং দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। সেই শুরু, তারপর দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

টেস্ট ক্রিকেটে পারফরম্যান্স

বিষয়তথ্য
ম্যাচ২০০
ইনিংস৩২৯
রান১৫৯২১
সর্বোচ্চ স্কোর২৪৮
গড় রান৫৩.৭৮
প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ১৪
শতরান৫১
অর্ধশতক৬৮
চার২০৫৮
ছক্কা৬৯
ক্যাচ১১৫

ওয়ানডে (ODI) ক্রিকেটে পরিসংখ্যান

বিষয়তথ্য
ম্যাচ৪৬৩
ইনিংস৪৫২
রান১৮,৪২৬
সর্বোচ্চ স্কোর২০০
গড় রান৪৪.৮৩
স্ট্রাইক রেট৮৬.২৩
শতরান৪৯
অর্ধশতক৯৬
চার২০১৬
ছক্কা২৯৫
ক্যাচ১৪০
প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ৬২

টি-টোয়েন্টি (T20I) ক্রিকেটে পরিসংখ্যান
 

বিষয়তথ্য
ম্যাচ
ইনিংস
রান১০
সর্বোচ্চ স্কোর১০
গড় রান১০. ০০
স্ট্রাইক রেট১৩৩.৩৩
শতরান
অর্ধশতক
চার
ছক্কা
ক্যাচ
প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ

আইপিএল (IPL) পরিসংখ্যান

বিষয়তথ্য
দলমুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের(MI)
ম্যাচ৭৮
ইনিংস৭৮
রান২৩৩৮
সর্বোচ্চ স্কোর১০০
শতক
অর্ধশতক১৩
গড় রান৩৪. ৮৩
স্ট্রাইক রেট১১৯. ৮২
চার২৯৫
ছক্কা২৯
ক্যাচ২৩
প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ
অরেঞ্জ ক্যাপ১ বার ২০১০ সালে

অধিনায়ক হিসেবেও শচীন ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি দলের দায়িত্বে ছিলেন। যদিও অধিনায়ক হিসেবে তাঁর রেকর্ড খুব উজ্জ্বল নয়, তবে একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি বরাবরই দলের প্রধান ভরসা ছিলেন।


শচীনের ক্রিকেট জীবনে বহু স্মরণীয় ইনিংস রয়েছে। ১৯৯৮ সালে শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর দুটি অসাধারণ শতরান (ডেজার্ট স্টর্ম ইনিংস) আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিরুদ্ধে করা অপরাজিত ১৪০ রানের ইনিংসটি ব্যক্তিগত শোকের মুহূর্তেও তাঁর পেশাদারিত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এছাড়াও, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ৯৮ রানের ইনিংসটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচিত হয়।


ব্যক্তিগত জীবনে শচীন অত্যন্ত শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের। ১৯৯৫ সালে অঞ্জলি তেন্ডুলকরের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। অঞ্জলি পেশায় একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে – কন্যা সারা এবং পুত্র অর্জুন। অর্জুনও এখন ক্রিকেটের জগতে পা রেখেছেন।


শচীন তেন্ডুলকর শুধু মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই নয়, মাঠের বাইরের আচরণ দিয়েও সকলের মন জয় করে নিয়েছেন। তাঁর বিনয়, নম্রতা এবং দেশপ্রেম তাঁকে এক আদর্শে পরিণত করেছে। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন।


ক্রিকেট বিশ্বে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহু পুরষ্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে অর্জুন পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০০৮ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১২ সালে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন এবং ২০১৩ সালে তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করা হয়। ভারতরত্ন পাওয়া প্রথম ক্রিকেটার এবং সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি তিনিই।


২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁর শেষ টেস্ট ম্যাচটি ছিল এক আবেগঘন মুহূর্ত। সারা বিশ্ব থেকে ক্রিকেটপ্রেমীরা সেদিন সাক্ষী ছিলেন এক কিংবদন্তীর বিদায়বেলার। শচীনের দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য ক্রিকেট জীবন বহু প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি শুধু একজন ক্রিকেটার নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি কিংবদন্তী যাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ক্রিকেটের ইতিহাসে।

Avatar photo

arif

আরিফ – ক্রিকেট বিষয়ক আপডেট ও বিশ্লেষণের কনটেন্ট লেখক আমি আরিফ, ক্রিকেট আমার ভালোবাসা। নাজিবুল ডট কম-এ আমি প্রতিদিনের খেলা, স্কোর আপডেট, খেলোয়াড় বিশ্লেষণ ও আকর্ষণীয় ক্রিকেট গল্প শেয়ার করি।

আমার সব আর্টিকেল

মন্তব্য করুন