দীঘা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?| দীঘার ইতিহাস

দীঘা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?| দীঘার ইতিহাস | Founder Of Digha | History of Digha| Let’s Go

দীঘা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?| দীঘার ইতিহাস

×

ভিডিও ক্রেডিট – Let’s Go With Soumalya


দীঘা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?| দীঘার ইতিহাস | Founder Of Digha | History of Digha| Let’s Go|Soumalya

সমুদ্রের অমোঘ টানে আপামর বাঙালি বারবার ছুটে এসেছে এই সৈকত শহরে। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমনকী সেলুলয়েডেও বহুবার ধরা দিয়েছে এই সৈকত শহরের সৌন্দর্য। কিন্তু এটা তো দিঘার বর্তমান ছবি। বহু বছর আগে ঠিক কেমন ছিল এই এলাকা ?

কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রেমানন্দ প্রধান তাঁর ‘হিজলিনামা’ বইতে জানিয়েছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সেটলমেন্টের রেকর্ডে বীরকুল নামে ওড়িশার জলেশ্বর চাকলার অধীনে থাকা একটি পরগনার উল্লেখ ছিল।

মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ গ্রন্থের অন্যতম লেখক ও মুগবেড়িয়া কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হরিপদ মাইতির কথায়, “১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বদান্যতায় মীরকাশিম দ্বিতীয়বার বাংলা, বিহার ও ওড়িশার নবাব হওয়ার প্রতিদানে ‘চাকলা মেদিনীপুর’, ‘চাকলা বধর্মান’ ও ‘চাকলা চট্টগ্রাম’-এর অধিকার ছেড়ে দেন। সেই সময় চাকলা মেদিনীপুরের ৫৪টি পরগনার মধ্যে একটি পরগনা ছিল বীরকুল। ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ওড়িশার উপকূলকে লিজ নেওয়ায় ব্যর্থ হন বাংলার তৎকালীন গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস। সেই সময় দক্ষিণ পশ্চিম মেদিনীপুরের ওড়িশা সীমান্ত লাগোয়া উপকূল অঞ্চল বীরকুল পরগনা তাঁর নজরে আসে।”

ইতিহাস বলছে, ১৭৭৫ সালে হেস্টিংস বীরকুলের মনোরম সমুদ্র সৈকতে গ্রীষ্মাবকাশ কাটানোর জন্য একটি বাংলো তৈরি করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশে ইংরেজদের মাছ ধরা, সমুদ্রস্নান-সহ বিনোদনের জন্য বীরকুলের সৈকতে বিশ্রামাগার তৈরির পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেন। ১৭৭৮ সালের বেঙ্গল গেজেটে সেই পরিকল্পনার কথাও উল্লেখিত ছিল। বীরকুল পরগনাকে ‘ব্রাইটন অফ ক্যালকাটা’ বলে স্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখও করেন তিনি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ আধিকারিকরা সস্ত্রীক বীরকুলে ছাউনি ফেলতেন। পরবর্তীকালে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আর ভূমিক্ষয়ে বীরকুল ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়। এমনকী হেস্টিংসের অবসর বিনোদনের বাংলোটিও পরে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সুসজ্জিত রানসউইক বাংলো। এর মাঝে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। ১৮৫২ সালে কাঁথি মহকুমা গঠনের সঙ্গে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য কাঁথি, খেজুরি, রামনগর, এগরা, পটাশপুর আর ভগবানপুর এই ছ’টি থানায় বিভক্ত করা হয়। কাঁথি মহকুমার রামনগর থানার এলাকার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয় অতীতের বীরকুল পরগনা। দিঘা তখনও ছিল বীরকুল পরগনার অখ্যাত পরিচয়হীন দুর্গম গ্রাম। ১৯২৩ সালে কলকাতার জুয়েলারি ও ঘড়ি তৈরির প্রসিদ্ধ হ্যামিলটন অ্যান্ড কোম্পানির মালিক জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ পুরনো কাগজপত্র ঘেঁটে আর রামনগরের বালিসাইয়ের বাসিন্দা এক খদ্দেরের কাছ থেকে বীরকুলে দিঘা সৈকতের কথা জানতে পেরে পারেন। নেহাতই কৌতুহলবশে হাতির পিঠে চেপে বীরকুলে এসে সৈকতের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে যান তিনি।

সমুদ্রপাড়ে ১১.৫ একর জমি লিজ পেয়ে সেখানেই রানসউইক হাউস তৈরি করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিঘাকে সৈকত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ আবেদন জানান তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় সৈকতাবাস, জল সরবরাহ-সহ নানা ব্যবস্থা। ১৯৬২ সালে বিধানচন্দ্র রায়ের মায়ের নামে ‘অঘোরকামিনী’ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়। হাত গুটিয়ে ছিলেন না স্নেইথ সাহেবও। তিনি বছরের ছ’মাস এই সৈকত শহরে থাকতেন। বাকি সময় শিলঙে। সেখান থেকে তিনি বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে প্লেনে চেপে আসতেন দিঘায়। সৈকতে প্লেন ওঠানামা দেখতে ভিড় জমাতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই সময় এলাকায় স্কুল স্থাপনের জন্য নাড়াজোলের রাজাকে দিঘায় বাড়ি তৈরি করতে সাহায্য করেন স্নেইথ সাহেব। এছাড়াও পযর্টকরা যাতে সরাসরি সড়ক পথে দিঘায় আসতে পারেন তার জন্য কলকাতা-দিঘা সড়ক তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

১৯৬৪ সালে মারা যান দিঘার প্রথম আবাসিক জন ফ্র্যাঙ্ক স্নেইথ। রানসউইক বাংলোতেই কবর দেওয়া হয় তাঁর দেহ। পরে রানসউইক বাংলো বিক্রি হয়ে যায়। দিঘা ঢোকার মুখে সদ্য নির্মিত প্রবেশ তোরণ পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই রাস্তার বাঁ দিকে চোখে পড়বে রানসউইক হাউস। বর্তমানে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহৃত এই ভবন বহু ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।

3/5 - (2 votes)
Sharing Is Caring: