তুলা

তুলা আঁশজাতীয় নরম পদার্থবিশেষ যা সংশ্লিষ্ট তুলা গাছের বীজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। তুলা দেখতে সাদা, লম্বা, পাতলা ও চুলের ন্যায় মিহি। তুলা গাছ থেকে সংগ্রহ করে সুতা, বালিশ, চিকিৎসা কর্মে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা হয়। তৈরীকৃত সুতা দিয়ে কাপড় প্রস্তুত করে মানুষের পোষাকসহ অনেক ধরনের জিনিসপত্রে ব্যবহার করা হয়।

তুলা একটি নরম, তুলতুলে প্রধান ফাইবার যা ম্যালো ফ্যামিলি Malvaceae- এর গসিপিয়াম গণের তুলা গাছের বীজের চারপাশে একটি বোল বা প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেত্রে জন্মে । ফাইবার প্রায় বিশুদ্ধ সেলুলোজ , এবং এতে সামান্য শতাংশ মোম, চর্বি, পেকটিন এবং জল থাকতে পারে। প্রাকৃতিক অবস্থার অধীনে, তুলার বোলগুলি বীজের বিচ্ছুরণ বৃদ্ধি করবে।

উদ্ভিদটি আমেরিকা, আফ্রিকা, মিশর এবং ভারত সহ বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের একটি গুল্ম । বন্য তুলা প্রজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ বৈচিত্র্য মেক্সিকোতে পাওয়া যায়, এরপর অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা। পুরাতন এবং নতুন বিশ্বে তুলা স্বাধীনভাবে গৃহপালিত ছিল।

ফাইবারটি প্রায়শই সুতা বা থ্রেডে কাটা হয় এবং একটি নরম, শ্বাস- প্রশ্বাসযোগ্য এবং টেকসই টেক্সটাইল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় । কাপড়ের জন্য তুলার ব্যবহার প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে জানা যায়; সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতায় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দের সুতি কাপড়ের টুকরো পাওয়া গেছে , সেইসাথে পেরুতে 4200 খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাপড়ের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে । যদিও প্রাচীনকাল থেকে চাষ করা হয়, এটি ছিল তুলো জিনের আবিষ্কার যা উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেয় যা এর ব্যাপক ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করে এবং এটি আজ পোশাকে সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রাকৃতিক ফাইবার কাপড়।

বিশ্ব উৎপাদনের বর্তমান অনুমান বার্ষিক প্রায় 25 মিলিয়ন টন বা 110 মিলিয়ন বেল , যা বিশ্বের আবাদযোগ্য জমির 2.5%। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম তুলা উৎপাদনকারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ।তুলার নানা জাতের গাছ রয়েছে। যথা: শিমুল গাছ, কারপাস গাছ, ফুটি কারপাস।

তুলার ইতিহাস

তুলোর ইংরেজি প্রতিশব্দ কটন যা আরবি (আল) কুতন্‌ থেকে উদ্ভূত। আনুমানিক ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দে এ শব্দের প্রচলন ঘটে। অনেক অনেক বছর পূর্বে তুলার আবিষ্কার হয়েছে। তুলা মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনতম ফসলরূপে পরিগণিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে তুলার ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে এর ব্যবহার অব্যাহত আছে। পৃথিবীর সকল দেশের, সকল শ্রেণীর মানুষ তুলা দিয়ে তৈরী কাপড় ও তুলাজাত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে আসছেন।

তুলার বিবরণ


তুলা প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে তুলা গাছ থেকে পাওয়া যায়। কয়েক ধরনের তুলা গাছ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে গুল্মজাতীয় কিছু তুলা গাছ বুনো পরিবেশে বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকাসমূহে জন্মায়। বুনো প্রজাতির বেশীরভাগ তুলা গাছই অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের পর মেক্সিকোতে উৎপন্ন হয়।অধিকাংশ তুলাই অর্থকরী ফসলরূপে জমিতে উৎপাদন করা হয় যা পরবর্তীতে কাপড় তৈরীর উদ্দেশ্যে জমায়েত করা হয়। তুলার খামারগুলো আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ আমেরিকায় দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার একর জমি তুলা চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাচীন ইতিহাসের ক্ষণস্থায়ী, মোটা কাপড়ের তুলনায় নিত্য-নতুন প্রজাতির তুলা গাছের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী দীর্ঘস্থায়িত্ব, মসৃণ কাপড় তৈরী হচ্ছে। তুলার নিজস্ব ওজন নিয়ে ২৪ থেকে ২৭ গুণ পানি ধারণ করতে পারে। তুলা গাছের সকল অংশই কোন না কোন কাজে লাগে।

বর্তমানে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন টন যা বিশ্বের তুলা আবাদের উপযোগী ভূমির মাত্র আড়াই শতাংশ ব্যবহারে উৎপাদিত। ২০০৯ সালের তথ্য মোতাবেক, চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ তুলা উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এরপরই রয়েছে ভারত। দেশ দু’টি যথাক্রমে ৩৪ মিলিয়ন বেল ও ২৪ মিলিয়ন বেল তুলা উৎপাদন করেছে। কিন্তু উৎপাদিত তুলার অধিকাংশই অভ্যন্তরীণ শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর যাবৎ সর্ববৃহৎ রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে পরিগণিত।দেশটি ৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছিল। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলা রপ্তানী করে। ১৯৮০ সাল থেকে আফ্রিকা তুলা বাণিজ্যে দ্বিগুণ অংশগ্রহণ করে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৫টি তুলা রপ্তানীকারক দেশগুলো হচ্ছে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া এবং উজবেকিস্তান। তুলা উৎপাদনবিহীন আমদানকারীকারক দেশগুলো হচ্ছে – কোরিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া, হংকং এবং জাপান।

Rate this post
Sharing Is Caring:

মন্তব্য করুন