জয়তুন

জয়তুন (যয়তুন) এক ধরনের ফল।যার বৈজ্ঞানিক নামঃ Olea europaea(ওলিয়া ইউরোপেই)। এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, তুরস্কের সামুদ্রিক অঞ্চল, ইরানের উত্তরাঞ্চল তথা কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণে ভাল জন্মে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব এর তেলের কারণে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জয়তুনকে অনেকেই কখনো কখনো জলপাই এর সাথে এক করে ফেলে, যদিও এ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ফল।

জয়তুনের বর্ণনা

জয়তুন গাছ হলো একধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষ। জয়তুন গাছ ৮-১৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতা ৪-১০ সে.মি. লম্বা ও ১-৩ সে.মি. প্রশস্ত হয়ে থাকে। জয়তুন ফল বেশ ছোট আকারের, লম্বায় মাত্র ১-২.৫ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে।

যুদ্ধে শান্তির প্রতীক হল জয়তুনের পাতা এবং মানুষের শরীরের শান্তির দূত হল জয়তুনের তেল যা অলিভ ওয়েল আরবিতে জয়তুন।

যেটাকে লিকুইড গোল্ড বা তরল সোনা নামেও ডাকা হয়। সেই গ্রীক সভ্যতার প্রারম্ভিক কাল থেকে এই তেল ব্যবহার হয়ে আসছে, রন্ধন কর্মে ও চিকিৎসা শাস্ত্রে। আকর্ষণীয় এবং মহনীয় সব গুণাবলি এই জয়তুনের তেলের মধ্য রয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশে জয়তুন তেলের ব্যবহার তেমন নেই। শুধুমাত্র শীতকালে শরীরে মাখার কাজে জয়তুন তেল ব্যবহৃত হয়, তাও খুব কম। এছাড়া খাওয়ার কাজে এটির ব্যবহার নেই বললেই চলে। জয়তুন ফলের দামের তুলনায় এর তেলের দাম আকাশচুম্বী।

জয়তুন তেল বা অলিভ অয়েল এ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখে। গবেষকরা দেখিয়েছেন খাবারে জয়তুনের তেল ব্যবহারের ফলে শরীরের ব্যাড ক্লোষ্টোরেল এবং গুড ক্লোষ্টোরেল নিয়ন্ত্রণ হয়। জয়তুনের তেলের আরেকটা গুণাবলি হল এটা পাকস্থলীর জন্য খুব ভালো। শরীরে এসিড কমায়, যকৃৎ (লিভার) পরিষ্কার করে, যেটা প্রতিটি মানুষের ২/৩ দিনে একবার করে দরকার হয়। কোস্ট কাঠিন্য রোগীদের জন্য দিনে ১ চামচ জয়তুন তেল অনেক অনেক উপকারী।সাধারণত সন্তান হওয়ার পর মহিলাদের পেটে সাদা রঙের স্থায়ী দাগ পড়ে যায়। গর্ভধারণ করার পর থেকেই পেটে জয়তুন তেল (অলিভ অয়েল) মাখলে কোন জন্মদাগ পড়ে না। এটা একটা পরীক্ষিত ব্যাপার। জয়তুন তেল গায়ে মাখলে বয়স বাড়ার সাথে ত্বক কুঁচকানো প্রতিরোধ হয়।গবেষকরা ২.৫ কোটি (25 মিলিয়ন) লোকজনের উপর গবেষণা করে দেখিয়েছেন, প্রতিদিন ২ চামচ কুমারী জয়তুন তেল (ভার্জিন অলিভ অয়েল) ১ সপ্তাহ ধরে খেলে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়। স্প্যানিশ গবেষকরা দেখিয়েছেন, খাবারে জয়তুন তেল ব্যবহার করলে ক্লোন ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। আরও কিছু গবেষক দেখিয়েছ, এটা ব্যাথা নাশক (পেইন কিলার) হিসাবে কাজ করে। গোসলের পানিতে ১/৪ চামচ ব্যবহার করে গোসল করলে শরীরে শিথিলতা পাওয়া যায়। মেয়েদের রূপ বর্ধনের জন্য এটা অনেকটা কার্যকর। ইসলাম ধর্মেও জয়তুনের তেলে খাওয়া এবং ব্যবহারের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহর রসূল (স.) বলেছেন, “তোমরা এই তেলটি খাও, তা শরীরে মাখাও।“[হযরত আবু হুরাইরা (রদ্বি.) হতে তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ্ বর্ণনা করছেন। ইবনে মাজাহ্-এ হাদিস নং ৩৩২০। সনদ সহীহ্]।

জয়তুনের তেল দ্বারা যে কোষ্ঠ কাঠিন্য কমে, তা ইবনুল কাইয়্যূম তার “The Medicine of the Prophet (sm.)” বইয়ে তা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন। বাজারে কয়েক ধরনের জয়তুনের তেল পাওয়া যায়। যেমন- ১। এক্সট্রা ভার্জিন – এটা প্রথম ধাপ। সরাসরি জয়তুন ফল থেকে তৈরি। এসিডেটি ১% এর নিচে। রান্নার জন্য বা সালাদে গবেষকরা এটা প্রস্তাব করেন। ২। ভার্জিন – এক্সট্রা ভার্জিন পরের ধাপ এটা। এতে এসিডের পরিমাণ ১ থেকে ২% থাকে। ৩। রিফাইন পিয়র-৩য় ধাপ। এতে এসিডের পরিমাণ ৩% থেকে ৪।

2.3/5 - (3 votes)
Sharing Is Caring:

মন্তব্য করুন