৬ এপ্রিল, ১৯৮৬ তারিখে শ্রীলঙ্কার সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এশিয়া কাপের ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিক ফাইনাল ম্যাচ। এর আগের আসরটি ছিল রাউন্ড-রবিন পদ্ধতি। এই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা এবং পরাক্রমশালী পাকিস্তান।
টুর্নামেন্টের নাম ছিল জন প্লেয়ার এশিয়া কাপ ৮৬ (John Player Asia Cup 86)।
টসে জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিলীপ মেন্ডিস প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন।
ম্যাচটি ছিল ৪৫ ওভারের ওয়ানডে ফরম্যাট। পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ের মুখে শুরুতেই চাপে পড়ে। ওপেনাররা দ্রুত আউট হলেও, অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদ (Javed Miandad) একাই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি ১০৮ বলে ৬৭ রানের একটি লড়াকু ইনিংস খেলেন, যা দলকে সম্মানজনক স্কোর গড়তে সাহায্য করে। শ্রীলঙ্কার পক্ষে স্পিনার কাউশিক আমালেয়ান দারুণ কিপটে বোলিং করে ৪/৪৬ উইকেট নেন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান নির্ধারিত ৪৫ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯১ রান সংগ্রহ করে।
- পাকিস্তানের স্কোরকার্ড: ১৯১ রান/৯ উইকেট/৪৫ ওভার
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার শুরুটা ভালো ছিল না। কিন্তু দলের মিডল অর্ডার দৃঢ়তা দেখায়। অধিনায়ক দিলীপ মেন্ডিস ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। তবে ম্যাচটি শ্রীলঙ্কার দিকে ঘুরিয়ে দেন তরুণ অলরাউন্ডার অর্জুনা রানাতুঙ্গা। তিনি ৫৫ বলে ৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ৪২.২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৫ রান তুলে নেয়। পাকিস্তানের পক্ষে আবদুল কাদির ৩/৩২ উইকেট নেন।
- শ্রীলঙ্কার স্কোরকার্ড: ১৯৫ রান/৫ উইকেট/৪২.২ ওভার
এই ম্যাচটি শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়লাভ করে।
দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা এই জয়ের মাধ্যমে তাদের প্রথম এশিয়া কাপ শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করে। পাকিস্তান রানার্স-আপ হয়।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা তার অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংসের জন্য এই ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ এবং টুর্নামেন্টের প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার লাভ করেন। এই ম্যাচটি শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
এই ম্যাচের সেরা ৫টি মুহূর্ত
১. রানাতুঙ্গার ম্যাচ-জেতানো ইনিংস: তরুণ অর্জুনা রানাতুঙ্গা তখন বয়স ২২ ৫৫ বলে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন। তার এই পারফরম্যান্স কেবল ফাইনাল জেতায়নি, তাকে প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার জেতার পথও প্রশস্ত করেছিল।
২. আমালিয়ানের বোলিং জাদু: শ্রীলঙ্কার স্পিনার কাউশিক আমালেয়ান ৪/৪৬ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের রানের গতি আটকে দিয়েছিলেন, যা স্বাগতিকদের জন্য কাজটা সহজ করে দেয়।
৩. এশিয়া কাপের প্রথম ফাইনাল: এটি ছিল এশিয়া কাপের ইতিহাসে খেলা প্রথম আনুষ্ঠানিক নকআউট ফাইনাল, যা টুর্নামেন্টের উত্তেজনা ও গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে।
৪. ভারতবিহীন আসর: রাজনৈতিক কারণে ভারত এই টুর্নামেন্টে অংশ না নেওয়ায়, এটি ছিল এশিয়া কাপের ইতিহাসে অন্যতম ব্যতিক্রমী ঘটনা।
৫. জাভেদ মিয়াঁদাদের একক লড়াই: পাকিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখেও জাভেদ মিয়াঁদাদ ১০৮ বলে ৬৭ রানের একক এবং লড়াকু ইনিংস খেলেছিলেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১৯৮৬ এশিয়া কাপে কোনো আনুষ্ঠানিক ফাইনাল হয়েছিল কি?
হ্যাঁ। ১৯৮৬ সালের এশিয়া কাপটি ছিল প্রথম আসর যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ফাইনাল ম্যাচ খেলা হয়েছিল। এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
এই টুর্নামেন্টের প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার কে পেয়েছিলেন?
শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার অর্জুনা রানাতুঙ্গা টুর্নামেন্টের ফাইনাল সহ ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ পুরস্কার লাভ করেন।
এই ম্যাচটি কেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
এটি ছিল শ্রীলঙ্কার প্রথম এশিয়া কাপ শিরোপা জয়, যা ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতকে ছাড়াই মহাদেশীয় ক্রিকেটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সাহায্য করেছিল।
১৯৮৬ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ কেন অংশ নিয়েছিল?
ভারত টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায়, তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC) তৎকালীন সহযোগী সদস্য বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল।
Your comment will appear immediately after submission.