ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা বোলারদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন । শ্রীলঙ্কার এই ডানহাতি অফ-স্পিনার তার জাদুকরী ঘূর্ণি বল এবং অদম্য লড়াইয়ের মানসিকতা দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে এক অনন্য স্থান তৈরি করে নিয়েছেন। টেস্ট এবং ওয়ানডে— দুই ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের মালিক এই কিংবদন্তি স্পিনার। তার জীবন ও ক্যারিয়ার শুধু রেকর্ডে ভরপুর নয়, বরং নানা বিতর্ক এবং চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার এক অসাধারণ গল্প।
মুত্তিয়া মুরালিধরনের সংক্ষিপ্ত তথ্যসমূহ
বিষয় | তথ্য |
পূর্ণ নাম | মুত্তিয়া মুরালিধরন (Muttiah Muralitharan) |
বাবার নাম | মুত্তিয়া চিনাসামি (Sinnasamy Muttiah) |
মায়ের নাম | লক্ষ্মী মুত্তিয়া (Lakshmi Muttiah) |
জন্মতারিখ | ১৭ এপ্রিল, ১৯৭২ |
জন্মস্থান | ক্যান্ডি, শ্রীলঙ্কা |
উচ্চতা | ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১৭০ সেমি) |
ধর্ম | হিন্দু |
জাতীয়তা | শ্রীলঙ্কান |
ব্যাটিং স্টাইল | ডানহাতি |
বোলিং স্টাইল | ডানহাতি অফ-স্পিনার |
প্রধান ভূমিকা | বোলার |
আন্তর্জাতিক অভিষেক | ১৯৯২ |
আন্তর্জাতিক অবসর | ২০১০ (টেস্ট), ২০১১ (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) |
প্রারম্ভিক জীবন ও ক্রিকেট ক্যারিয়ার
মুরালিধরনের জন্ম শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি শহরে। তার পরিবার একটি কনফেকশনারি ব্যবসা পরিচালনা করত। ছোটবেলায় তিনি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলা শুরু করলেও, পরে তিনি স্পিন বোলিংয়ে মনোনিবেশ করেন। তার বোলিং অ্যাকশনের অস্বাভাবিকতা ছোটবেলা থেকেই ছিল, কারণ তার জন্মগতভাবে কনুই সোজা করার সমস্যা ছিল। এই শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই তার বোলিংয়ে এমন জাদু ছিল যা অন্য কারও মধ্যে দেখা যায় না।
১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুরালিধরনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। শুরুর দিকে তিনি তার বোলিং অ্যাকশনের কারণে অনেক সমালোচনার শিকার হন। ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বক্সিং ডে টেস্টে আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার তার বোলিং অ্যাকশনকে ‘চাকিং’ (অবৈধ) বলে ঘোষণা করেন, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বিশাল বিতর্ক তৈরি হয়।
বোলিং অ্যাকশনের বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
মুরালিধরনের ক্যারিয়ারে বোলিং অ্যাকশনের বিতর্ক ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। বারবার তার অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং আইসিসি তাকে একাধিকবার পরীক্ষা করিয়েছে। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষাতেই বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তার কনুইয়ের জন্মগত সমস্যার কারণেই এমন দেখায় এবং তার বোলিং আইসিসির নিয়মের মধ্যে ছিল। এই বিতর্কগুলো তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে এবং তিনি আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে মাঠে ফেরেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রেকর্ডসমূহ
মুরালিধরনের বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল তার অদ্ভুত রিস্ট অ্যাকশন এবং ফিংগার স্পিন। তার ‘দুসরা’ বলটি ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
- টেস্ট ক্রিকেট: মুরালিধরন টেস্ট ক্রিকেটে ৮০০ উইকেট নিয়েছেন, যা এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তার এই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে শেষ টেস্টে তিনি ৮০০তম উইকেটটি শিকার করে ক্রিকেটকে বিদায় জানান।
- ওয়ানডে ক্রিকেট: ওয়ানডেতেও তিনি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী (৫৩৪ উইকেট)।
- বিশ্বকাপ জয়: ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
মুরালিধরন তার ক্যারিয়ারে এমন অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন যা একজন বোলার হিসেবে তাকে অমর করে রেখেছে।
আইপিএল ও পরবর্তী জীবন
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর মুরালিধরন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এ খেলা চালিয়ে যান। তিনি চেন্নাই সুপার কিংস, কোচি টাস্কার্স কেরালা এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলেছেন। আইপিএলেও তিনি অন্যতম সফল স্পিনার ছিলেন।
খেলোয়াড় জীবন শেষে তিনি বিভিন্ন দলের বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এবং অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের বোলিং কোচ ছিলেন।
মুত্তিয়া মুরালিধরনের টেস্ট বোলিং পরিসংখ্যান
ম্যাচ | ১৩৩ |
ইনিংস | ২৬৫ |
উইকেট | ৮০০ |
সেরা বোলিং | ৯/৫১ |
বোলিং গড় | ২২.৭২ |
৫ উইকেট | ৬৭ বার |
১০ উইকেট | ২২ বার |
মুত্তিয়া মুরালিধরনের ওয়ানডে (ODI) বোলিং পরিসংখ্যান
ম্যাচ | ৩৫০ |
ইনিংস | ৩১৮ |
উইকেট | ৫৩৪ |
সেরা বোলিং | ৭/৩০ |
বোলিং গড় | ২৩.০৮ |
৫ উইকেট | ১০ বার |
১০ উইকেট | ০ |
মুত্তিয়া মুরালিধরনের টি-টোয়েন্টি (আন্তর্জাতিক) বোলিং পরিসংখ্যান
ম্যাচ | ১২ |
ইনিংস | ১২ |
উইকেট | ১৩ |
সেরা বোলিং | ৩/২৯ |
বোলিং গড় | ২২.৮৫ |
৫ উইকেট | ০ |
১০ উইকেট | ০ |
মুত্তিয়া মুরালিধরনের আইপিএল বোলিং পরিসংখ্যান
ম্যাচ | ৬৬ |
ইনিংস | ৬৩ |
উইকেট | ৬৩ |
সেরা বোলিং | ৩/১১ |
বোলিং গড় | ২৬.৭৫ |
৫ উইকেট | ০ |
১০ উইকেট | ০ |
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি
মুরালিধরনের মোট টেস্ট উইকেট কত?
তিনি টেস্ট ক্রিকেটে মোট ৮০০টি উইকেট নিয়েছেন, যা বিশ্ব রেকর্ড।
মুরালিধরনের বোলিং অ্যাকশন কেন বিতর্কিত ছিল?
তার জন্মগতভাবে কনুই সোজা করার সমস্যা ছিল, যা তার বোলিং অ্যাকশনকে অস্বাভাবিক করে তুলতো। আইসিসি একাধিকবার পরীক্ষা করে তার অ্যাকশন বৈধ বলে ঘোষণা করে।
মুরালিধরন কি বিশ্বকাপ জিতেছেন?
হ্যাঁ, তিনি ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন।
মুরালিধরন কোন আইপিএল দলের হয়ে খেলেছেন?
তিনি চেন্নাই সুপার কিংস, কোচি টাস্কার্স কেরালা এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলেছেন।
মুরালিধরনের বিখ্যাত বলটির নাম কি?
তার বিখ্যাত বলটির নাম ‘দুসরা’।
Your comment will appear immediately after submission.