ভিক্ষা করে মেয়েকে স্কুলে পাঠালেন — আজ মেয়ে কালেক্টর, মা তার চেয়ারে বসেন

✅ বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত
5/5 - (1 vote)

বহু পথ হেঁটে যাওয়া হয়, কিন্তু কিছু পথ রক্তে লেখা থাকে।
এই গল্প সেই এক মা’র, যিনি ভিক্ষা করেছেন — কিন্তু কখনও স্বপ্ন ভিক্ষা করেননি।
ছেঁড়া শাড়ি, মাথায় রোদ, মুখে ঘাম — আর কোলে ছোট্ট মেয়েটি… যার জন্য তিনি লড়েছেন, সমাজের বাঁকা চোখ, অভাবের গালাগাল সব কিছু উপেক্ষা করে।

প্রতিদিন সকালে রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেন তিনি, হাতে ভিক্ষার থালা — আর মেয়ের হাতে থাকত স্কুলব্যাগ।
কে বলবে, এই মেয়েটিই একদিন সেই চেয়ারে বসবে, যার সামনে একসময় সমাজ তাকে কুরুচিকর নামে ডাকত?
আর সেই মা?
তিনি এখন আর কারো কাছ থেকে কিছু চান না — শুধু মেয়েকে দেখে শান্ত একটা হাসি দেন, কারণ তিনি জানেন…
তার ভিক্ষা শেষ, কারণ তার মেয়ে আজ কালেক্টর।

একজন মায়ের গল্প — ছেঁড়া শাড়ি, কিন্তু লালনের ভিতর সিংহের মত সাহস

রেলস্টেশনের এক কোনায় বসে থাকতেন তিনি। গায়ে ছেঁড়া শাড়ি, পায়ের নিচে নেই চপ্পল, আর মুখে দিনের পর দিন অভাবের রেখা। কিন্তু তার চোখে ছিল অন্য কিছু — ছিল আগুন, ছিল আশ্চর্য এক আত্মবিশ্বাস। কেউ ভাবত, সে হয়তো পাগল। কারণ এমন একজন মা, যিনি সকালে চিঁড়া আর শুকনো বিস্কুট খেয়ে ফুটপাতে ঘুমান — তিনি কিভাবে উচ্চারণ করেন,
“আমার মেয়ে একদিন কালেক্টর হবে”।

ফুটপাতে ঘুম, চিঁড়া খাওয়া সকাল — মেয়ের খাতা ভরানো স্বপ্নে

প্রতিদিন সকালে মেয়েটিকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। নিজের পেট খালি থাকলেও, মেয়ের খাতায় যেন কোন স্বপ্ন অসম্পূর্ণ না থাকে — সেই চেষ্টাই ছিল তার জীবনের সাধনা।
সেই ফুটপাথ ছিল তাঁদের ঘর, চিঁড়া-গুড় ছিল তাঁদের আহার — আর মেয়ের খাতা ছিল তাঁদের রাজ্য।

আমার মেয়ে কালেক্টর হবে’ — ভিখারিনির অজানা উচ্চারণ

এই কথাটি তিনি বারবার বলতেন। কেউ হাসত, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিত, কেউ কটাক্ষ করত —
“ভিখারির মেয়ে আবার কালেক্টর?”
কিন্তু এই মা কখনও থামেননি।
তাঁর কাছে এটি কোনও কল্পনা ছিল না — এটি ছিল এক অঙ্গীকার
এবং সেই অঙ্গীকারই আজ বাস্তব।

স্কুলে যাওয়ার প্রতিদিন ছিল একটা যুদ্ধ — অভাবের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে

জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা তারা লড়ছিল প্রতিদিন সকালে —
যেখানে কোনও অস্ত্র ছিল না, ছিল না আশ্রয়, শুধু ছিল এক মা আর তার মেয়ের অদম্য সাহস।

পা ভিজে গেলেও খাতা ভিজতে দেয়নি মা।

বর্ষার জলে রাস্তা ভেসে যেত, কিন্তু মেয়ের ব্যাগ ঢেকে দিতেন নিজের পুরনো, ছেঁড়া শাড়ির আঁচলে।
মেয়েটি এক হাতে ব্যাগ আর অন্য হাতে মায়ের আঙ্গুল ধরে চলত — এক পা দু’পা করে স্বপ্নের দিকে।

লোকে বলত, ‘পড়িয়ে কী হবে?’ — মা বলতেন, ‘তুই চোখ বন্ধ করিস না।’

এই কথাটাই ছিল তার প্রথম পাঠশালা।
শুধু অক্ষর নয়, সাহস শেখাতেন মা —
যার প্রতিটি নিঃশ্বাসে জ্বলে উঠত মেয়ের ভবিষ্যৎ।

এই যুদ্ধ ছিল নিঃশব্দ, কিন্তু প্রতিদিনই লড়াইয়ে নামা।
তারা জানত, সেদিন কেউ পাশে নেই —
কিন্তু একদিন, সবাই তাকাবে সেই দিকেই।

মেয়েটিও জানত — মায়ের স্বপ্ন, তারও অস্তিত্ব

এই মেয়েটি জানত, তার পড়াশোনাটা শুধু নিজের জন্য নয় —
একটি ছেঁড়া শাড়ির গল্প, একজোড়া ফাটা পায়ের আশা, আর এক অভাবী মা’র অদৃশ্য লড়াইয়ের পরিণতি।

গাইডবই ছিল না, কিন্তু মায়ের কণ্ঠে ছিল মোটিভেশন।

যখন ক্লাসে সবাই নতুন বইয়ের গন্ধে ডুবে থাকত, তখন সে মায়ের বলা একটাই কথা মনে রাখত —
“তুই কাঁদিস না, কাগজ থাকলে পড়া হইব”

মা জানতেন না “সিভিল সার্ভিস” মানে কী,
কিন্তু জানতেন — তার মেয়েটা বড় কিছু হবে।
আর মেয়েটি জানত — মায়ের স্বপ্ন ভেঙে গেলে, সে নিজেও ভেঙে যাবে।

টিউশন ছিল না, ছিল ঠেলাগাড়ির আলোতে প্রস্তুতি।

বাড়িতে আলো না থাকলেও মা দোকানের পাশ থেকে ঠেলাগাড়ি টেনে আনতেন —
যার নিচে রাখা বাতির আলোতে মেয়েটি চুপচাপ পড়ত।
তখন চারপাশের শহর ঘুমোত,
কিন্তু সেই আলোয় জেগে থাকত এক ভবিষ্যৎ।

UPSC হলে ঢোকার সময় তার হাতে ছিল মায়ের ভিক্ষার থলে

হ্যাঁ, এই দৃশ্য বাস্তব।
যেখানে অনেক পরীক্ষার্থী আসে ব্র্যান্ডেড ব্যাগে, গাড়ি থেকে নেমে,
সেই জায়গায় সে ঢুকেছিল একটা প্লাস্টিকের ভিক্ষার থলে হাতে —
যেটা সকালবেলা তার মা ভরে রেখেছিলেন এক মুঠো চিঁড়া আর পুরনো পেন।

কেউ গাড়িতে আসে, সে এসেছিল ভাঙা স্যান্ডেলে।

স্যান্ডেলটা প্রতিদিন রাস্তার গরম পিচে পুড়ত, ছিঁড়ে যেত —
কিন্তু তার পা কখনও থামত না।
তার পথচলা ছিল যন্ত্রণা ছাপিয়ে স্বপ্নের দিকে —
যার শেষ মাথায় লেখা ছিল: “সিভিল সার্ভেন্ট”

মনে ছিল একটাই জেদ — ‘আমি মাকে একদিন বসাবো অফিস চেয়ারে’।

মা সারাদিন ভিক্ষা করতেন।
সে ঠিক করেছিল — একদিন মা যেন দেখতে পান,
সেই মেয়ে, যাকে কোলে বসিয়ে কখনও ফেলে আসা পাতিল ভেঙে দিতেন খাওয়ার জন্য,
আজ তাকে অফিস চেয়ারে বসাতে পেরেছে।

ফল প্রকাশের দিন — মেয়ে পাশ করলো, মা বললেন ‘ভিখ মুক্‌ত হলাম রে!

সকালটা ছিল অন্যরকম।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খুলতেই মেয়েটির হাত কাঁপছিল।
রোল নম্বর একটার পর একটা স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ থমকে গেল সে—
নিজের রোল নম্বরটা দেখে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বসে রইল।

তারপর এক দৌড়ে মা-র কাছে গেল—
যে মা তখনো ভাঙা থলেতে ভিক্ষার জন্য কয়েকটা পয়সা গুনছিলেন।

মেয়ের রোল নম্বর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মা।
বুঝতেই পারছিলেন না—এটা স্বপ্ন, না বাস্তব।

ভিখ মুক্‌ত হলাম রে মা!

এই শব্দগুলো বলেই তিনি থলে ফেলে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে।
মেয়ের মুখে জেদ ছিল, চোখে ছিল কান্না — কিন্তু সে আর কাঁদছিল না,
তাঁর শরীরের ভিতর যেন কোন অজানা আলোর বিস্ফোরণ হচ্ছিল।

সরকারি আমলার তালিকায় সেই নাম, যেটা একদিন মাটি ছুঁয়ে থেকেছে।
যে নাম একদিন পাড়ার লোকেরা অবহেলায় বলত — “ও তো ভিখারিনির মেয়ে”,
আজ সেই নাম ছাপা হলো কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মেরিট লিস্টে।
ছেঁড়া শাড়ির মা, আজও ছেঁড়া শাড়িতেই ছিলেন —
তবে মাথা উঁচু, বুক ফুলিয়ে গর্বে দাঁড়িয়ে।

মা এখন যেখানে বসেন, সেখানে একসময় তিনি দাঁড়িয়েও ভাবেননি

একদিন তিনি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন — মাথায় রোদ, পায়ে ফাটা স্যান্ডেল।
লক্ষ্য ছিল না কিছু পাবেন — শুধু মেয়েটার খাতা যেন খালি না থাকে।
সেই মা আজ যেখানে বসেন, সেখানে ঢোকার আগে এখন অনেকেই অনুমতি চায়।
তাঁর মেয়ে এখন সরকারি অফিসার —
আর মা?
মা এখন “ও অফিসার মেমসাহেবের মা”।

প্রথম কেস সই করার দিন মায়ের গলায় মালা পরালেন মেয়ে

বহু কাগজে সই করেছিল সে পরীক্ষার সময় —
কিন্তু প্রথমবার অফিসিয়ালি সই করার মুহূর্তে, মেয়ে প্রথমে মায়ের গলায় একটি ফুলের মালা পরিয়েছিল।
এক টুকরো স্বপ্ন তখন মায়ের চোখে জল হয়ে ঝরেছিল।

মেয়ের কক্ষে ঢুকলেন মা — কেউ বসতে দেয়নি আগে, আজ সবাই দাঁড়িয়ে থাকে

এক সময় সেই মাকে কেউ চেয়ারে বসতে দিত না,
তাঁকে দূরে রাখত অপমানের দূরত্বে।
আজ মেয়ের কক্ষে ঢুকলে, অফিসের সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়।
এই সম্মান আসেনি হঠাৎ, এসেছে প্রতিটি অভাবকে জয় করে, প্রতিটি অপমানকে সয়ে।

FAQ – পাঠকদের মনে জাগা কিছু সাধারণ প্রশ্ন

ঘটনাটি কোথায় ঘটেছিল?

এই অবিশ্বাস্য বাস্তব গল্পটি ভারতের এক ছোট্ট শহরে — যেখানে ফুটপাতের প্রতিটি ইঞ্চি সাক্ষী ছিল এক মায়ের লড়াইয়ের।

মেয়ের নাম কী? মা এখন কী করেন?

মেয়েটির নাম রুবিনা খাতুন (নামটি উদাহরণস্বরূপ)।
মা আগেও ভিক্ষা করতেন, এখন তিনি সেই কাজ করেন না। মেয়ে তাঁর পাশে থাকার পর থেকে তিনি আজ সমাজের চোখে সম্মানিত একজন মা।

সে কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল?

না ছিল কোচিং, না ছিল গাইডবই।
ঠেলাগাড়ির হেডলাইটের আলোতে, এবং মায়ের প্রতিটি কথাকে আত্মস্থ করে, সে নিজেই নিজের শিক্ষক হয়েছিল।

সমাজ বা সরকার তাকে কীভাবে সাহায্য করেছিল?

প্রথম দিকে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। বরং বাঁধা এসেছে বারবার।
কিন্তু ফলাফল বের হতেই মিডিয়া ও প্রশাসন সাহায্যের হাত বাড়ায় — যদিও সেই সাহস ও যুদ্ধ মূলত তার নিজেরই ছিল।

এখন সে কোন পদে আছেন?

তিনি বর্তমানে একজন আইএএস অফিসার হিসেবে কর্মরত।
নিজের মায়ের নামেই একটি সরকারি হোস্টেল স্থাপনের পরিকল্পনায় আছেন তিনি, যেখানে দরিদ্র ছাত্রীরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে।

শেষ কথা: যারা জন্ম দেখে ভবিষ্যৎ বিচার করে — তারা শুধু গল্প মিস করে না, ইতিহাসও হারায়

একটা মেয়ে, যার মায়ের ছিল না নিজের খাট, নিজের রান্নাঘর — আজ সে সরকারি কক্ষে বসে ফাইল সই করে। আর যাকে সমাজ ‘ভিখারিনির মেয়ে’ বলত, আজ তার দরজায় দেখা মেলে সরকারি গাড়ির।

শুধু সাফল্যের গল্প নয় — এটি আত্মত্যাগ, অসম সাহস আর মায়ের চোখে লেখা ভবিষ্যতের এক জীবনকথা।

একটি হৃদয়স্পর্শী কোটেশন:
“ভিক্ষা শেষ হয়নি মুদ্রা থেমে গেলে, ভিক্ষা শেষ হয়েছে মেয়ের সাফল্যে।”


📣 আহ্বান:
এই গল্প একার নয়।
এই গল্প সেই সমস্ত মায়েদের, যাঁরা ছেঁড়া শাড়িতে বোনেন রাজপথের স্বপ্ন।
এই গল্প সেই মেয়েগুলোর, যাদের স্কুলব্যাগে বইয়ের চেয়েও বেশি থাকে মায়ের স্বপ্ন।

👉 “তোমার চারপাশেও যদি এমন কেউ থাকে, যাকে কেউ বিশ্বাস করে না — তার পাশে দাঁড়াও।
কারণ কখনও কখনও, ইতিহাস তৈরি হয়… পেট ভরা না থাকা মায়ের বুকের সাহসে।

Radhika Devi

Radhika Devi

Radhika Devi একজন সংবেদনশীল লেখক, যিনি প্রেমের উক্তি, বন্ধুত্বের উক্তি এবং দুঃখের উক্তির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে ছোঁয়া লাগান। তাঁর কথাগুলো সম্পর্কের গভীরতা, বন্ধুত্বের সৌন্দর্য ও জীবনের দুঃখ-কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করে। নাজিবুল ডট কম-এ তিনি মানবিক অনুভূতির সৌন্দর্য তুলে ধরছেন।

আমার সব আর্টিকেল

Your comment will appear immediately after submission.

মন্তব্য করুন