কয়েক কিমি কাঁধে মৃত মেয়েকে নিয়ে হাঁটা — এক বাবার অশ্রুসিক্ত প্রতিবাদ

🌐 Language: BN | Isolated: ✅
✅ বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত
5/5 - (1 vote)

রাস্তাটা ফাঁকা ছিল না,
চারপাশে লোকজন ছিল— কেউ বাজারে যাচ্ছিল, কেউ মোবাইলে ব্যস্ত, কেউ চা খাচ্ছিল।
কিন্তু ওই ভিড়ের মধ্যে একটা দৃশ্য ছিল যা চোখ ছলছল করিয়ে দেয় —
একজন বাবা কাঁধে করে তার ছোট্ট মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে হাঁটছেন।

না, এটা সিনেমা নয়। এটা কোনও কল্পনা নয়।
এটা ভারতবর্ষের বাস্তব, যেখানে দারিদ্র্য কেবল অভাবে থেমে থাকে না,
থামে মর্যাদার কাছেও।

Advertisements

সেই ছোট্ট মেয়েটির নাম ছিল অমঙ্গলী।
মাত্র বারো বছর বয়সে সে বিদায় নেয়,
আর তার বাবার নাম — দানা মাঝি।
পেশায় দিনমজুর, হাতে সামান্য টাকা, কিন্তু হৃদয়ে পাহাড় সমান ভালোবাসা।

যখন হাসপাতালে মেয়েটি মারা যায়, তখন কেউ এগিয়ে আসেনি।
না হাসপাতাল, না প্রশাসন — কেউ একটা গাড়ি পর্যন্ত দেয়নি মরদেহ নিয়ে যেতে।
শেষমেশ, একজন বাবা হয়ে উঠলেন নিজের মেয়ের লাশবাহী কাঁধ

এই ঘটনা শুধু একজন দুঃখী বাবার গল্প নয় —
এটা গোটা সমাজের মুখে জোরে চড় কষানো এক প্রশ্ন।

👉 আপনি এই লেখাটি পড়ছেন মানেই আপনি এখন ওই মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন,
দেখছেন তার বাবার কাঁধ থেকে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম পড়ছে, আর চারপাশে নীরবতা নাচছে।

এই আর্টিকেল সেই নীরবতাকে চিরে দিয়ে বলবে —
“এই সমাজে যদি দানা মাঝি নামক কোনো বাবা হাঁটতে পারে, তাহলে মানবতা আজও বেঁচে আছে কিনা, তা আমরা ঠিকই জানি।”

রোগে নয়, ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল — আর একজন শিশু হারিয়ে গেল

একটা নিঃশব্দ বিকেল।
জীবন তখন থেমে ছিল না, কিন্তু কারও কারও জন্য ঘড়িটা হঠাৎই দাঁড়িয়ে যায়।

সেই বিকেলে, সাত বছরের ছোট্ট অমঙ্গলী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
জ্বরের ঘোরে কাঁপছিল শরীর। দানা মাঝি, একজন দরিদ্র আদিবাসী পিতা —
কাঁধে করে মেয়েকে নিয়ে দৌঁড়ালেন গ্রামীণ হাসপাতালের দিকে।

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ছোট্ট মেয়ে

মেয়ের মুখটা ফ্যাকাশে, চোখে ভয়, ঠোঁট নীলচে…
আর সেই ছোট্ট হাতটা বাবার হাত মুঠো করে ধরে রেখেছিল।
কিন্তু হাসপাতাল তখন যেন ঘুমোচ্ছিল।
না ছিল পর্যাপ্ত চিকিৎসক, না ছিল ওষুধ —
শুধু ফাইলপত্র আর “কাল আসুন” টাইপের কণ্ঠস্বর।

হাসপাতাল পৌঁছালেও বাঁচানো যায়নি

সব জায়গা ঘুরেও অমঙ্গলী বাঁচল না।
তার বুকের ধুকপুকানি থেমে গেল।
একজন বাবা দাঁড়িয়ে আছেন বিছানার পাশে —
নিজের মেয়ের নিথর শরীরের দিকে চেয়ে, অথচ চোখে কোনো চিৎকার নেই —
শুধু একরাশ বোবা হাহাকার।

মৃত্যুর পর শুরু হলো আরেক লড়াই — মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার লড়াই

সবচেয়ে নির্মম অধ্যায় ছিল এরপর —
হাসপাতাল মরদেহ পাঠাতে গাড়ি দেয়নি।
সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সমাজ, কিন্তু তারা কেবল দেখছিল —
কেউ এগিয়ে এল না।

তখন দানা মাঝি ঠিক করলেন — নিজের কাঁধেই মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।
১৫ কিমি রাস্তা…
রোদে পুড়ে, চোখে জল চেপে, তিনি হেঁটে চললেন —
কাঁধে নিজের মৃত সন্তানের দেহ নিয়ে।

একটা ছবিতে দেখা গেল —
একজন বাবা, কাঁধে তাঁর মেয়ে, মুখে একটা শব্দও নেই।
পেছনে হাঁটছে তাঁর স্ত্রী —
হাত দুটো বুকের কাছে চেপে ধরে, চোখ থেকে জল ঝরছে নিঃশব্দে।

অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে এক পিতা হয়ে উঠলেন লাশবাহী কাঁধ

×

এটি কেবল একটি খবর ছিল না — এটি ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার সামনে এক আয়না, যেখানে প্রতিচ্ছবিতে একজন ভাঙা বাবা, কাঁধে তার সন্তানের নিথর দেহ।

হাসপাতালের আশ্বাস ছিল, গাড়ি আসবে

“গাড়ি আসছে, একটু অপেক্ষা করুন” —
হাসপাতালের কেউ একজন এইটুকু বলেই চলে গিয়েছিল।
পাশের বেঞ্চে বসে স্ত্রী বারবার জিজ্ঞেস করছিল,
“ওদের মুখে তো কথা আছে, তবু এতো দেরি কেন?”
দানা মাঝির চোখে তখন কেবল একটাই লক্ষ্য —
মেয়েকে ঘরে নিয়ে যেতে হবে। শেষবারের মতো।

সময় গড়ায়, কিন্তু কেউ আসে না — চোখে অন্ধকার নেমে আসে

ঘণ্টা পার হলো, ছায়া লম্বা হতে লাগল,
রোদ পড়ে এল, তবুও কেউ এল না।
নতুন কাগজ, নতুন স্বাক্ষর, নতুন অপেক্ষা —
কিন্তু কোথাও গাড়ির শব্দ নেই।
একটা হাসপাতালের আঙিনায় দাঁড়িয়ে শুধু দুইটা শরীর —
একটা জীবিত, একটায় প্রাণ নেই।
আর চিৎকার?
না, চিৎকার নেই। ছিল শুধু একটা ক্রমশ জমাট বাঁধা নীরবতা।

শেষমেশ কাঁধেই তুলে নেন নিজের কন্যার নিথর দেহ

তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন দানা মাঝি।
অন্য কোনো গাড়ি নয়,
নিজেই হবেন সেই বাহন।
নিজের গায়ে চাদর মুড়ে,
তিনি কাঁধে তুলে নিলেন সাত বছরের মেয়ের মরদেহ।
পাশে হাঁটছেন স্ত্রী — তার বুক থেকে ছিঁড়ে নেওয়া হাহাকার মুখে ফুটছে না,
শুধু চোখ বেয়ে ঝরছে নোনা জল।

রাস্তায় তখন মানুষ দেখছিল — কেউ কেউ ছবি তুলছিল, কেউ কেউ মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছিল।
কিন্তু কেউ তাদের যাত্রাপথে পা বাড়ায়নি।

❝ “কেউ যখন কিছু দিল না, তখন আমি শুধু ওকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
ওর শরীরটাও তো আমারই। ওকে ফেলে তো আসতে পারি না।” — দানা মাঝি ❞

মা পাশে কাঁদছিলেন, আর মানুষ মোবাইলে ভিডিও করছিল

সামাজিক বাস্তবতা — সবাই দেখে, কেউ এগিয়ে আসে না

চোখের সামনে পড়ে আছে ছোট্ট একটা দেহ — নিথর, নিস্তব্ধ, আর ফিরে আসবে না। পাশে এক মা থরথর করে কাঁপছেন, কান্না করছেন — কিন্তু চারপাশের মানুষ? তারা থেমে নেই। তারা ব্যস্ত মোবাইল তোলায়, শিরোনাম বানাতে। যেন আরেকটা ‘ভাইরাল’ কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে।
কেউ এগিয়ে আসেনি, কেউ বলেওনি, “ভাই, আমি সঙ্গে যাব।”
সমাজ যেন এখন কেবল ক্যামেরার চোখে মানুষ দেখে — হৃদয়ের চোখে নয়।

স্ত্রীর কান্না, মেয়ের নিথর দেহ, আর ভিডিও করা দর্শক — এক ছবিতে বন্দি দেশের বিবেক

এটা শুধু একটি দৃশ্য নয় — এ এক জাতীয় প্রতিচ্ছবি, যেখানে সরকার, সমাজ, সহানুভূতি — সবকিছু যেন একসাথে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
একটা ছবিতে আপনি দেখবেন:
একজন নারী কাঁদছেন, তার কোল ফাঁকা।
একজন পিতা নিঃশব্দে হেঁটে চলেছেন — কাঁধে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পুরো পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা।
আর আশপাশে দাঁড়িয়ে, মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছেন কিছু মানুষ — যেন তারা সিনেমা দেখছেন।
এই একটা দৃশ্যই যেন বলে দেয় — আমাদের বিবেক কতটা অসাড়, আর কতটা প্রযুক্তি-নেশাগ্রস্ত।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল — এর দায় নেবে কে?

এই দেশে প্রতিটি মৃত্যুর পর প্রশ্ন ওঠে,
“কে দায়ী?”
কিন্তু উত্তর আর আসে না।
এই শিশুটির মৃত্যুর জন্য কি শুধু রোগ দায়ী ছিল?
না কি সেই ভাঙা অ্যাম্বুলেন্স-ব্যবস্থা, সেই অলস প্রশাসন, আর অসাড় মানবিকতা?
যতবার এমন ঘটনা ঘটে, ততবার দেশ থমকে দাঁড়ায়… তারপর আবার ভুলে যায়।

দানা মাঝি শুধুমাত্র একজন বাবা নন — তিনি আমাদের নীরবতার মুখচ্ছবি

এই ঘটনা শুধু একজন গরিব মানুষের নয় — এটি মানবতার চরম পরাজয়

দানা মাঝি একজন বাবা, যিনি নিজের কন্যার নিথর দেহ কাঁধে নিয়ে কয়েক কিলোমিটার হাঁটেন।
তাকে দেখে আমাদের মনে কষ্ট হয় — কিন্তু এ কষ্ট ক্ষণিকের।
আসলে এই দৃশ্যটা আমাদের সামনে আয়নার মতো দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদেরই মানবিক পরাজয়।
আমরা যে সমাজ বানিয়েছি, সেখানে দরিদ্রদের দুঃখ শুধু হেডলাইন হয় — সমাধান নয়।
এই ঘটনা শুধুমাত্র দানা মাঝির নয় —
এটি সেই সব নির্লিপ্ত চোখের, অসাড় ব্যবস্থার,
যারা দেখতে পারে, কিন্তু দেখতে চায় না।

আমরা সমাজ হিসেবে কতটা অমানবিক হয়ে উঠেছি, তা এই হাঁটার প্রতিটি পদক্ষেপে লেখা

একজন পিতা যখন কাঁধে করে মৃত কন্যাকে নিয়ে হাঁটে —
তখন সে কেবল সন্তান হারানো এক অসহায় মানুষ নয়,
সে তখন পুরো সমাজের চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা চেহারায় পরিণত হয়।
একটি সমাজ, যেখানে কেউ পাশে দাঁড়ায় না।
একটি দেশ, যেখানে ক্ষতিপূরণ দিয়ে চোখে ছিটানো হয় সস্তা সহানুভূতি।
প্রতিটি পদক্ষেপে, দানা মাঝি আসলে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন —
আমরা সবাই কোথাও না কোথাও দায়ী।

FAQ – পাঠকদের মনে জাগা কিছু সাধারণ প্রশ্ন

দানা মাঝি এখন কোথায় আছেন?

ঘটনার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, দানা মাঝিকে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে সে কেমন আছে, কীভাবে কাটে তার দিন — তা নিয়েও আর কেউ জানতে চায়নি।

সেই ঘটনার পর পরিবার কেমন আছে?

মেয়ের মৃত্যু, সামাজিক কলঙ্ক, এবং সহানুভূতির নামে রাজনৈতিক ছলনার চাপ — এই পরিবারের জীবনে শান্তি আর ফেরেনি। তারা আজও বেঁচে আছে, কিন্তু সমাজ তাদের ভুলে গেছে।

সত্যিই কি অ্যাম্বুলেন্স ছিল না, নাকি অমানবিকতা ছিল বেশি?

প্রশ্নটা সেখানেই — যন্ত্র না ছিল, না মনুষ্যত্ব। অ্যাম্বুলেন্স ছিল না, কিন্তু চারপাশে ছিল শতশত মানুষ। কেউ এগিয়ে আসেনি। এটা কেবল গরিবের বেদনা নয়, সমাজের বিবেকহীনতার দলিল।

এই ঘটনায় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিয়েছিল?

মিডিয়া চাপে প্রশাসন তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিল। কিছু ক্ষতিপূরণও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আজও প্রশ্ন থেকে যায় — এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামাতে কি কিছু করা হয়েছে?

শেষ কথা: যেদিন একটা কাঁধ মরদেহ বয়ে নিয়ে যায় — সেদিন পুরো একটা সমাজ মারা যায়

একজন অসহায় পিতা যখন কাঁধে করে নিজের শিশুকন্যার মরদেহ নিয়ে হাঁটে, তখন শুধু একটা জীবন থেমে যায় না — থেমে যায় মানবতার স্পন্দন। আমরা দেখি, কিন্তু এগিয়ে আসি না। আমরা জানতে চাই, কিন্তু সহানুভূতি দেখাই না।

📌 “একটা শিশু মরলো চিকিৎসার অভাবে, একটা বাবা ভাঙলো রাষ্ট্রের চাপে, আর একটা সমাজ নির্বাক দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো — ইতিহাস একে কখনো ক্ষমা করে না।”

এই লেখা শুধু দানা মাঝির কষ্ট নয় — এটা আমাদের প্রত্যেকের সেই নীরব সম্মতির দলিল, যেদিন আমরা চুপ করে থেকেছিলাম।
হয়তো আমরা সবাই দোষী না — কিন্তু নিশ্চুপ থেকে আমরা নির্দোষও নই।

👉 চাই না যে, তোমার চোখে জল আসুক — চাই শুধু এই চোখটা খোলা থাকুক।
👉 চাই না প্রতিদিন বাঁচাতে পারো কাউকে — চাই শুধু, চোখ মেলে দেখো, মুখ খুলে প্রশ্ন করো।

❝ সমাজ বদলাতে হয় না, সমাজ জেগে উঠলেই অনেক কিছু বদলে যায় ❞

Advertisements
Radhika Devi

Radhika Devi

Radhika Devi একজন সংবেদনশীল লেখক, যিনি প্রেমের উক্তি, বন্ধুত্বের উক্তি এবং দুঃখের উক্তির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে ছোঁয়া লাগান। তাঁর কথাগুলো সম্পর্কের গভীরতা, বন্ধুত্বের সৌন্দর্য ও জীবনের দুঃখ-কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করে। নাজিবুল ডট কম-এ তিনি মানবিক অনুভূতির সৌন্দর্য তুলে ধরছেন।

আমার সব আর্টিকেল

Your comment will appear immediately after submission.

মন্তব্য করুন