রাতের আকাশে তাকিয়ে কখনো কি আপনি ভেবেছেন— “আমি কি পারি ওই তারার দেশে যেতে?”
একটা ছোট শহরের মেয়ে ভেবেছিল। শুধু ভাবেইনি, নিজের ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে স্বপ্নটাকে ধরে রেখেছিল শক্ত করে।
তাঁর নাম— কল্পনা চাওলা।
স্বপ্নকে যিনি কল্পনায় আটকে রাখেননি, বাস্তবের গায়ে ছুঁয়ে দেখেছিলেন।
তিনি ছিলেন এক নারী, এক স্বপ্ন, এক মহাকাশযাত্রী— আর লাখো হৃদয়ের অনুপ্রেরণা।
সেই কারনাল শহর, সেই কল্পনার জন্ম
১৯৬২ সাল। হরিয়ানার ছোট্ট শহর কারনাল।
একটি মেয়ে জন্ম নিচ্ছে, ঘরের মানুষ জানতেও পারছে না—এই শিশু একদিন পৃথিবীর মাটি ছেড়ে আকাশ ছুঁয়ে যাবে।
সে মেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবত, “ওখানে কী আছে?”
তার বন্ধুরা পুতুল খেলত, কল্পনা চাওলা প্লেন আঁকত, তারার মানচিত্র বানাত।
একদিন সে বলল— “আমি মহাকাশে যাব।”
হাসাহাসি হল, কেউ বলল— ‘তুমি তো মেয়ে।’
সে বলেছিল— “আমি মানুষ। স্বপ্ন দেখার অধিকার আমারও আছে।”
লাল মাটির পথ থেকে নাসার নীল পোশাক
কল্পনার পড়াশোনার শুরু কারনালেই।
পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে এয়ারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন।
তখন পুরুষদের দখলেই ছিল এই শাখা।
কিন্তু কল্পনা বলেছিলেন—
“আমি সেই পথেই হাঁটব যেখানে মেয়েরা এখনো সাহস করে পা রাখেনি।”
এরপর যুক্তরাষ্ট্রে যান। টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি।
তাঁর প্রতিটি পা ছিল ধাপে ধাপে এক অনন্য যাত্রা— যেন প্রতি রাতেই তারাগুলোর দিকে একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন।
নাসায় কল্পনার প্রথম ডাক
১৯৯৪ সাল।
NASA তে অ্যাস্ট্রোনট হিসেবে নির্বাচিত হলেন কল্পনা চাওলা।
ভারতের মাটিতে তখন নতুন সূর্যোদয়।
এক ভারতীয় নারীর হাতে মহাকাশযাত্রার টিকিট—যা শুধুমাত্র তাঁর মেধা, অধ্যবসায় ও অগাধ স্বপ্ন দিয়ে কেনা।
১৯৯৭ সালে ‘Columbia STS-87’ মিশনে তিনি প্রথমবার মহাকাশে যান।
পৃথিবী থেকে কয়েক লক্ষ কিমি দূরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন—
“From space, borders vanish. The Earth looks like one.”
এই কথাটিই হয়ত তার জীবনের দর্শন ছিল— মানুষ বিভাজন করে, কিন্তু মহাকাশ আমাদের এক করে দেয়।
মৃত্যু নয়, মহাকাশে চিরস্থায়ী হওয়া
২০০৩ সালে দ্বিতীয় যাত্রা ছিল তাঁর ‘Columbia STS-107’।
মিশনের কাজ সফল হলেও, পৃথিবীর বুকে ফেরার আগেই স্পেস শাটল ভেঙে পড়ে।
সাতজনের মধ্যে তিনিই ছিলেন আমাদের কল্পনা।
কিন্তু যিনি স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছিলেন, তিনি কি মরে যেতে পারেন?
তাঁর শরীর হয়তো মহাকাশেই থেকে গেছে,
কিন্তু তাঁর স্বপ্ন আজো পৃথিবীর প্রতিটি মেয়ের চোখে জ্বলজ্বল করে।
পাঠকের চোখে ছবি আঁকা: কল্পনাকে কল্পনায় নয়, হৃদয়ে দেখুন
চোখ বন্ধ করে ভাবুন—
এক মেয়ে, ছোট একটি শহরে বেড়ে ওঠা, তাঁর ঘরে বই নেই, প্রযুক্তি নেই, কিন্তু আছে আকাশের প্রতি অদম্য আকর্ষণ।
প্রতিদিন আঁকছে, পড়ছে, স্বপ্ন দেখছে—
আর একদিন মহাকাশে উড়ে যাচ্ছে।
এই কল্পনাকে যখন আপনি দেখেন, তখন আপনার নিজের ভেতরের ‘আমি পারি না’ কথাগুলো মুছে যেতে শুরু করে।
কল্পনার উত্তরাধিকার: শুধু অনুপ্রেরণা নয়, এক বিপ্লব
আজ, তাঁর নামে স্কুল, স্কলারশিপ, বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে।
তিনি আমাদের দেখিয়েছেন— “নির্বাচন নয়, ইচ্ছা হলে মেয়েরাও মহাকাশ ছুঁতে পারে।”
আপনি যদি আপনার মেয়েকে বলে থাকেন, “তুমি পারবে না”—
এই লেখাটি তাঁকে পড়তে দিন।
তিনি নিজেই বলবে— “আমিও একদিন কল্পনা হব।”
প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর (FAQ)
উপসংহার
এই গল্পটি একটি মেয়ের নয়— এটি কোটি মেয়ের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসের গল্প।
যখন কল্পনা মহাকাশে গিয়েছিলেন, তখন হয়তো তিনি জানতেনই না—
তিনি শুধু নিজের স্বপ্ন নয়, হাজারো মেয়ের স্বপ্নকেও জাগিয়ে তুলছেন।
তাঁর গল্প আমাদের শেখায়—
“স্বপ্ন যদি বিশুদ্ধ হয়, পরিণতি আসবেই।”
“সীমা তুমি, তুমি পারবে — শুধু নিজেকে বিশ্বাস করো।”
কল্পনা চাওলা কোথা থেকে ছিলেন?
তিনি ভারতের হরিয়ানার কারনাল শহরের বাসিন্দা ছিলেন।
তিনি কবে মহাকাশে যান?
প্রথমবার ১৯৯৭ সালে ‘Columbia STS-87’ মিশনে, এবং দ্বিতীয়বার ২০০৩ সালে ‘STS-107’ মিশনে।
তাঁর মৃত্যু কিভাবে হয়?
২০০৩ সালে পৃথিবীতে ফেরার পথে Columbia স্পেস শাটল দুর্ঘটনার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।
কল্পনা চাওলার অনুপ্রেরণা কী?
তিনি ছোটবেলা থেকেই আকাশ ও মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন এবং দৃঢ় মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
কল্পনা চাওলার জীবনের মূল বার্তা কী?
স্বপ্ন দেখতে ভয় পেও না, আর নিজের সীমা নিজেরাই নির্ধারণ করো না।